কর্মস্থলে ফিরতে হিমশিম খাচ্ছেন বাহরাইন থেকে আসা ১৫০০ জন কর্মী
করোনা মহামারির কারণে বাহরাইন থেকে দেশে আসা ৩ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় ১৫০০ জন তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। গত বছরের মার্চ থেকে এসকল কর্মী দেশে আসা শুরু করেন। মানামায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বরাতে রোববার এ খবর প্রকাশ করে বাহরাইন নিউজ।
বাহরাইনে কর্মরত যেসকল বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছিলেন তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় তাদের ভিসা নবায়ন করছে না বাহরাইন।
২০১৩ সাল থেকে বাহরাইনের একটি রেস্তোরাঁয় কর্মরত এরশাদুল হক গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ফ্লাইট স্থগিত করা হলে কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি কুমিল্লার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী এ ব্যক্তি।
তিনি জানান, তার ভিসার মেয়াদ গত বছরের মে মাসে শেষ হয়ে গেছে এবং এটি নবায়ন করতে পারেননি তিনি।
বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, এরশাদের মতো বাংলাদেশে আটকে থাকা প্রায় ১৫০০ শ্রমিক বর্তমানে একই পরিস্থিতে রয়েছে।
কমপক্ষে ১৮ মাস যাবত কোনো চাকরি ছাড়াই আর্থিক সংকটে কঠিন জীবন যাপন করছে তারা।
"আমার স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা এবং মা সহ ১০ জন সদস্যের একটি পরিবার আছে। আমি প্রায় ২ লাখ টাকা নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমি অর্থহীন। পারিবারিক খরচ বহনের জন্য আমাকে গত কয়েক মাস ধরে টাকা ধার করতে হয়েছে," বলেন এরশাদ।
তবে তিনি বলেছেন যে তার মালিক পুনরায় তাকে কাজে নিয়োগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু মহামারিতে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদেরকে অনুমতি দিচ্ছে না বাহরাইন কর্তৃপক্ষ।
এরশাদ আরও বলেন, "আমার মালিক আমাকে বলেছেন যে বাংলাদেশ দূতাবাস বাহরাইন সরকারকে এই শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখনও এ সমস্যার সমাধান করতে পারছে না।"
এদিকে, তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সাহায্য চেয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন এসকল কর্মী।
তারা বলেন, যখন তারা বাড়িতে এসেছিল তখন তাদের বৈধ ভিসা ছিল। নিজেদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার যোগ্য ছিলেন তারা। তাদের প্রশ্ন হলো- কেন তারা এখন বাহরাইনে বৈধ শ্রমিক হিসাবে ফিরে যেতে পারেন না।
এদিকে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক লোক কাজের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোতে চলে গেছেন।
বাহরাইন থেকে ফিরে আসা আরেক বাংলাদেশি ইমরান হোসেন আশিক সম্প্রতি কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গিয়েছেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ফোনে বলেন, "প্রায় ১৮ মাস বাড়িতে থাকার পর আমি এই বছরের ২৭ আগস্ট ওয়ার্ক ভিসায় সৌদি আরব পৌঁছেছি। বাহরাইনের ভিসা নবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এখানে এসেছি আমি। তবে আমি বাহরাইনের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসাবে আমার চাকরিটি মিস করি। সেখানে আমার মাসিক বেতন ছিল প্রায় ৫৫ হাজার টাকা।"
তিনি সুযোগ পেলে সৌদি আরব থেকে আবারও বাহরাইন যাবেন বলে আশা করেন। তার মালিক এখনও তাকে চাকরিতে রাখতে চান।
বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক আশিক আরও বলেন, "বাহরাইন থেকে ফিরে আসা প্রায় ১৫০০ শ্রমিক অন্যান্য দেশে চলে গেছেন। আমরা যারা নতুন গন্তব্যে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য পাইনি তারা এখনও বাড়িতে রয়ে গেছি।"
বাহরাইনে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান খাত হচ্ছে নির্মাণ। উপসাগরীয় এ দেশটিতে মোট বাংলাদেশি কর্মীদের ৭০ শতাংশ অদক্ষ, আধা-দক্ষ এবং দক্ষ কর্মী হিসেবে এই ক্ষেত্রের সাথে জড়িত।
একটি বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে।
এদিকে, এ বছরের জানুয়ারিতে ফোনালাপের মাধ্যমে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাতিফ বিন রশিদ আল জায়ানিকে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তবে, এ বিষয়ে মতামতের জন্য মানামায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ পরামর্শক শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা এর আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, যাদের বৈধ ভিসা আছে তারা বর্তমান স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে বাংলাদেশ থেকে বাহরাইন ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে, গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক বাহরাইন থেকে ফিরে এসেছেন।
বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা প্রায় ২ লাখ অভিবাসী করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশে আটকে পড়ে। তাদের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং বাহরাইন থেকে আসা শ্রমিক ব্যতীত অধিকাংশই ইতোমধ্যে নিজেদের কর্মস্থলে পৌঁছে গেছেন।