কলা চাষে শতাধিক তরুণের ভাগ্য বদল
খায়রুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিচিকা গ্রামে। ২৬ বছরের এই তরুণ গত ১০ বছর ধরে কলাচাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তার নিজের পাঁচ বিঘা জমিতে কলার চাষ রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ১৫ লাখ টাকায় বিনিময়ে আরও ১০ হাজার গাছ এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। গাছ প্রতি তার গড়ে খরচ পড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
খায়রুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে তিনি ৫০০ কাঁদি কলা রাজশাহীর বানেশ্বর কলাহাটে নিয়ে যান। এ ছাড়া পবার বায়া হাটেও পাইকারি বিক্রি করেন। গ্রীষ্মকালে কলার দাম কাঁদি প্রতি ৬০০ টাকা পর্যন্তও পান। তবে শীতকালে দাম কিছুটা কম থাকে।
তিনি বলেন, খরচ বাদ দিয়ে তার প্রতিবছর আট থেকে দশ লাখ টাকা আয় হয়।
শুধু খায়রুলই নয়, তার মতো শতাধিক তরুণ রাজশাহীতে কলা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকে নিজের জমিতে, পুকুর পাড়ে ও পতিত জমিতে কলা গাছ লাগিয়ে চাষাবাদ করেন। অনেকে অন্যের বাগান ইজারা নিয়ে ব্যবসা করেন।
রাজশাহীর কাটাখালীর মো. দুলালের দুই বিঘা জমিতে ৮০০টি কলা গাছ রয়েছে। তিনি ওই গাছের কলা বিক্রি করে বছরে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
তিনি বলেন, ‘কলার বাগানে ঝামেলা কম। তেমন কোনো টেনশন নিতে হয় না। ঝুঁকি ছাড়াই আবাদ করা যায়। লাভও বেশ ভালো।’’
রাজশাহীর দুর্গাপুরের মকছেদ আলীও এ বছর আট হাজার কলা গাছ ইজারা নিয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে বানেশ্বর ও ঝলমলিয়াসহ মোট চারটি হাটে বেচাকেনা করেন। সপ্তাহে তিনি এক হাজার কাঁদির ওপর কলা বিক্রি করেন। মকছেদ আলী বলেন, কলা বিক্রি করে তিনি সাবলম্বী হয়েছেন।
পবার দাওদপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ২৬টি পুকুর লিজ নেয়া রয়েছে। ওইসব পুকুর পাড়ে তার সাত হাজার কলা গাছ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ১৩ লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছিলাম। এবার আশা করছি তারচেয়ে বেশি টাকার কলা বিক্রি হবে।’’
রাজশাহীর বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া কলার হাট এ অঞ্চলে বিখ্যাত। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে বসে হাট। শনি ও মঙ্গলবার বানেশ্বর হাট এবং শুক্র ও সোমবার ঝলমলিয়া হাট বসে। হাটগুলো থেকে কলা কিনে ব্যবসায়ীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান। হাটগুলোতে প্রায় সব ধরনের কলার কেনাবেচা হয়। শুধু বানেশ্বরেই প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ হাজার কাঁদি কলা আমদানি হয়। সে হিসেবে গড়ে ৪০০ টাকা কাঁদি ধরলে শুধু বানেশ্বরেই প্রতি হাটে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়। সপ্তাহে তা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। শীতকালে কম আমদানি হলেও গ্রীষ্মকালে কলার আমদানি বেশি হয়। প্রতি হাটে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক কলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়।
গত ২৪ ডিসেম্বর বানেশ্বরে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে শিবপুর নামক জায়গায় কলার হাটটি গড়ে উঠেছে। হাটটি বসে খুব ভোরে। সকাল ৯টার মধ্যেই বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। এরপর ট্রাকে লোড করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। পাশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে ভ্যানভর্তি করে কলা পাঠানো হয়।
কলার পাইকারী ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতি হাটে তিনি গড়ে ২ হাজার কাঁদি কলা কিনে থাকেন। এরপর তা রাজধানীর বিভিন্ন মোকামে পাঠান। সপ্তাহে তিন ট্রাক কলা ঢাকায় পাঠান বলে জানান তিনি।
কলার আড়তদার মো. শরিফ বলেন, প্রতি হাটে ১০ থেকে ২০ হাজার কাঁদি কলা আমদানি হয়। ঢাকা, সাভার, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কলা পাঠান তারা। শীতকালে ভালো কলা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কাঁদি এবং গ্রীষ্মকালে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই কলা চাষ হলেও পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও চারঘাট উপজেলায় কলার উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। জেলায় এ বছর এক হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে ৬৩ হাজার টন কলার উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।