কালো কাপড়ে শহীদ মিনার ঢেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ
জেলা জজ কর্তৃক সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ এবং শহীদ মিনার নিয়ে কটুক্তি ও অবজ্ঞার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা কালো কাপড়ে শহীদ মিনার ঢেকে দিয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন। অবিলম্বে শহীদ মিনার এলাকা থেকে বাণিজ্যিক মার্কেট অপসারণ ও শহীদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকার করে জেলা জজের নাজির কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বাতিলের দাবিতে জেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মুুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। রোববার সকাল ১১টায় বিক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় প্রবেশ করেন। তারপর শহীদ মিনার এলাকায় অবৈধ বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদ জানান এবং স্মারকলিপি দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান স্মারকলিপি গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাধ্যমে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিলে শহর প্রদক্ষিণ করে তারা সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন। এরপর শহীদ মিনার কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়ে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা জেলা জজের বদলি ও শহীদ মিনার অবমাননা করায় তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের ডিএস রোডের উঁচু ভূমিতে (গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন) শহীদদের স্মরণে নিজেরাই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। সেখানেই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করেন তারা। এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ওখানে পালন করে আসছেন।
তারা অভিযোগ করেন, গত জানুয়ারিতে শহীদ মিনারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সুনামগঞ্জ জেলা জজ রাতের আঁধারে দুটি বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করেন। এর প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ বর্জনের ঘোষণা দিলে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের নেতৃত্বে পূর্বদিকের মার্কেটটি অপসারণ করা হয়। কিন্তু পশ্চিম দিকের মার্কেটটি বিপুল অংকের টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ২১ ফেব্রুয়ারির কয়েকদিন পরই আবার রাতের আঁধারে পূর্বপাশের বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণস্থলে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কলাগাছ রোপন করে শহীদ মিনারের প্রতি অবজ্ঞা দেখানো হয়। এ ঘটনায় আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।
তারা ১ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা দিবস প্রস্তুতি অনুষ্ঠানে শহীদ মিনার দখলের প্রতিবাদে ২৬ মার্চের কর্মসূচী বর্জনের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তারা শহীদ মিনার রক্ষার দাবি জানান। তাছাড়া শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় জেলা জজের কর্মচারীরা গরুর খামার, রিকশার গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট, মোদি দোকানসহ মার্কেট বানিয়ে ভাড়া দিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আড়াল করার নিন্দাও জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বঞ্চিত করে আদালতে বাইরের কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় সেটা বাতিলের দাবিও জানান তারা।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী কর্মসূচীতে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজী নূরুল মোমেন, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান, সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর প্রমুখ। প্রতিবাদী কর্মসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনতাও সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধারা সভায় ঢুকে শহীদ মিনার এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ ও শহীদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকার করে মামলা করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদেরকে তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণের জন্য দিয়েছেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেব।