কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামির পলায়ন, ১২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত
গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদী পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রধান কারারক্ষীসহ ১২জন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র সুপার জাহানারা বেগম জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার আবাদ চন্ডীপুর এলাকার তেছের আলী গাইনের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (৩৪) গত ২০১১ সালের ১৪ জুন হতে এ কারাগারে বন্দি ছিলেন। শ্যামনগর থানার একটি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী হিসেবে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুরের এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ২০০২ সালের ১৭ মার্চ এর একটি হত্যা মামলায় (নং-১২) আদালত আবু বকরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকরের আদেশ দেন ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। পরবর্তীতে আসামীর আপিলের প্রেক্ষিতে আদালত ২০১২ সালের ২৭ জুলাই ওই সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লকআপের সময় বন্দিদের গণনাকালে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর হতে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় কারাগারের পক্ষ থেকে বিকেলে জিএমপি'র কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও কয়েদি আবুবকর সিদ্দিক কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ মে সন্ধ্যায় কারাগারের সেল এলাকার একটি সেফটি ট্যাংকির ভিতরে লুকিয়ে নিজেকে আত্মগোপন করেছিলেন। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন কারগারের ৪০নং সেল এলাকার ওই সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর তাকে কারাগারে কিছুদিন শিকল পড়িয়ে রাখা হতো। এতে আবু বকর কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শিকল মুক্ত করে দেয়া হয়। কারা চত্বরে তিনি অন্য বন্দিদের সঙ্গে কাজ-কর্ম করতেন। তবে মানবিক কারণে তাকে কাজের জন্য চাপ দেয়া হতো না। বৃহস্পতিবারও কারাভ্যন্তরে অন্যদের সঙ্গে মুক্ত ছিলেন আবুবকর। সন্ধ্যায় লকআপের সময় বন্দিদের গণনাকালে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কারাগারের ৬টি ভবনের ২৪টি কক্ষে তার খোঁজ না পেয়ে সকল বন্দিদের রুলকল করে আবু বকরের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। তাকে খোঁজা হচ্ছে। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি কারাগার থেকে কৌশলে পালিয়ে গেছেন।
কারাগারের অপর একটি সূত্র জানায়, কারাগারের দেয়ালে থাকা আগাছা পরিষ্কার ও রং করার কাজে ব্যবহৃত মই দিয়ে বৃহস্পতিবার যে কোন সময় পালিয়ে যেতে পারেন আবু বকর।
জিএমপি'র কোনাবাড়ি থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় কারাগারের জেলার বাহারুল ইসলাম বাদী হয়ে বিকেলে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পলাতক আবু বকরের সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে।
কারাগারের সিনিয়র সুপার জাহানারা বেগম আরো জানান, কারাগার থেকে কয়েদি নিখোঁজ হওয়ার এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধান কারারক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট ১২জন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি বকর সিদ্দিক নিখোঁজ হয়েছে। তার সন্ধান করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।