খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার দাবি বিশেষজ্ঞদের
খাদ্যে উচ্চমাত্রার শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকলেও ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণের খসড়া নীতিমালাটি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ আইনি অবকাঠামোর মধ্যে দ্রুত না আনলে এর প্রভাব মাহামারি আকার ধারণ করবে। তাই দ্রুত এই প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা জরুরি।
এছাড়াও ট্রান্সফ্যাটের ক্ষতির দিক নিয়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কনজিউমারদের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণের খসড়া নীতিমালার অগ্রগতি ও গণমাধ্যমের করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরতে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহায়তায় শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের শহীদ ডাক্তার শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষে সাংবাদিক কর্মশালা আয়োজন করে অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। কর্মশালায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম বলেন, 'শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট খাদ্যের একটি বিষাক্ত উপাদান, যা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডালডা বা বনস্পতি ঘি এবং তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যে ট্রান্সফ্যাট থাকে।'
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, 'আমাদের গবেষকদল ঢাকার ডালডা নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২% মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পেয়েছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।'
কর্মশালায় প্রজ্ঞা'র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) 'খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১' প্রণয়নে কাজ করছে।
প্রবিধানমালা চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, 'খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই খসড়া প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করতে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে।'
গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, 'ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বাজার দিন দিন বাড়ছে। ট্রান্সফ্যাটমুক্ত পণ্য তৈরি করতে না পারলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার হারাব এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়বে এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয় বাড়বে।'
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞা'র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।