খুলনায় চিকিৎসক হত্যা: প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার ৫
খুলনার রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ও বাগেরহাট ম্যাটসের অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুর রকিব খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি জমিরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে আবদুর রহিম নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির এ তথ্য জানান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মবিরতি ৭২ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে ডা. রকিব হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জমির, আবুল আলী, গোলাম মোস্তফা ও খাদিজাকে গাজীপুরের টঙ্গী এবং খুলনার রূপসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে এজাহারভুক্ত চার আসামির মধ্যে তিনজন রয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুরে চিকিৎসকের ছোট ভাই খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।
এদিকে, ডা. আব্দুর রকিব খানের আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তির এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে খুলনায় মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেন। বুধবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনার ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও করোনা হাসপাতাল এর বাইরে থাকে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, বাগেরহাট ম্যাটসের অধ্যক্ষ ডা. রকিব হত্যার প্রতিবাদে বিএমএ খুলনা শাখার আহ্বানে মিলন চত্বরে সর্বস্তরের চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে কর্মসূচি শেষে এক সভায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘটনা পরবর্তী সময়ে মামলা নিতে গড়িমসি করায় সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান চিকিৎসকরা। এছাড়া সব হাসপাতালে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালোব্যাজ ধারণ করেন তারা।
প্রসঙ্গত, নগরীর মোহাম্মদ নগরীর পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে ১৪ জুন সিজারের জন্য রাইসা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় অপারেশন হয়। বাচ্চা ও মা প্রথমে সুস্থ ছিলেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ হলে ১৫ জুন সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানের চিকিৎসকরাও রোগী রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে ঢাকায় স্থানান্তর করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে ১৫ জুন রাতে মারা যান শিউলী বেগম।
এ ঘটনায় নিহত রোগীর স্বজনরা ১৫ জুন রাত পৌঁনে ৯টার দিকে রাইসা ক্লিনিকে গিয়ে ডা. রকিবকে লাথি ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথার পেছনে জখম হয়। তাকে প্রথমে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে ১৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।