গত পাঁচ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে আমদানি বেশি, রপ্তানি কম
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় এ বন্দর থেকেই। বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়। তবে রপ্তানি হয় আমদানির চারভাগের একভাগ। গত ৫ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। আর ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন পণ্য।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ মেট্রিক টন, রপ্তানি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ মেট্রিক টন, বিপরীতে রপ্তানি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন, বিপরীতে রপ্তানি ৪ লাখ এক হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন, বিপরীতে রপ্তানি ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ মেট্রিক টন, বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে- শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারির যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, মেলামিন, তৈরি পোশাক ও বসুন্ধরা টিস্যু উল্লেখ্যযোগ্য।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, "স্থলপথে যাতায়াত সহজ হওয়ায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়ে থাকে। অথচ বন্দরটি অবহেলিত। সরকারের এদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এখান থেকে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীদের জন্যও ভালো হবে। সেই সাথে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়ে যাবে। "
প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি আছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে আমদানি-রপ্তানির ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল দিয়ে। তবে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে সরকারের দ্বিগুন রাজস্ব আদায় হতো।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বন্দরের ভেতর জায়গা স্বল্পতায় যত্রতত্র পণ্য রাখতে হচ্ছে। এতে রোদ-বৃষ্টিতে পণ্যের গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে এবং চুরির আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও বন্দরে ক্রেন ও ফর্কক্লিপের সংকট বহুদিনের।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, "আজও ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার বাণিজ্যক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে এখান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে।"
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, "ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট নির্ধারণ হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।"
বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষপাতী। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ।"