গ্রামবাসীর বাধার মুখে আবরারের বাড়িতে যেতে পারলেন না বুয়েট উপাচার্য
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বুধবার গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতার কঠোর অবস্থান ও প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, আবরারের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এবং তার কবর জিয়ারত করতে সকালে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। তার আসার কথা কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে আবরারের আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও গ্রামবাসী আগে থেকে বাড়ির সামনে অবস্থান নেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্য আবরারের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা পৌঁছান। এ সময় তার সঙ্গে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন ও পুলিশ সুপার এসএম তানভীন আরাফাত ছিলেন। সেখানে তিনি আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার পর আবরারের কবর জিয়ারত করেন।
এরপর তিনি নিহত আবরারের মাকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে উত্তেজিত গ্রামবাসী উপাচার্যকে ঘিরে রেখে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিলে উপাচার্য পরে পুলিশ প্রহরায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
উপাচার্যের প্রস্থানের পর পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ , তার ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী ও এলাকাবাসী অন্য এক নারী আহত হন বলে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফাইয়াজ উপাচার্যের কাছে তার গ্রামে আসার কারণ জানতে চান। এর আগে কোথায় ছিলেন, এ ধরনের প্রশ্নও করেন তাকে। তখন ধাক্কা দিয়ে তাকে উপাচার্যের সামনে থেকে সরিয়ে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
কুমারখালি থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, “উপাচার্য ঘটনাস্থলে আসার আগেই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করি। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু উপাচার্য আবরারের মায়ের সঙ্গে দেখা করার আগেই গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন। পরিস্থিতি খারাপ হলে ভিসি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিশের সহযোগিতায়।”
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি ফাইয়াজ বা গ্রামবাসীর কারও ওপর পুলিশের আঘাত করার কথা অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে, গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলেও উপাচার্য সে সময় ঘটনাস্থলে যাননি। এমনকি তার নামাজে জানাজাতেও অংশ নেননি। আবরারের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানাননি তিনি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, উপাচার্য এখন কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন। এখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
প্রসঙ্গত, বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে (২১) গত রোববার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাসুক এলাহি তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার রাতে বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে আবরারের মরদেহ কুষ্টিয়ায় আনা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কুষ্টিয়া শহরের পিটিটিআই রোডে তাদের নিজেদের বাড়িতে আবরারের মরদেহ পৌঁছুয়। সেখানে আল-হেরা জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৬টায় আবরারের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে আবরার ফাহাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।