চট্টগ্রামে করোনার যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি প্রমাণিত: গবেষণা
সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত এক সংবাদে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলিয়ান ও আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের উপস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল। এবার যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক।
তারা চট্টগ্রামের ১০ জন রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে এ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
সিভাসুর উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে পোলট্রি রিসার্চ ও ট্রেনিং সেন্টারে (পিআরটিসি) একদল গবেষক ১০ জন রোগীর নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করেন। অপর গবেষকেরা হলেন সিভাসুর অধ্যাপক পরিতোষ কুমার বিশ্বাস ও অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী। জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে ঢাকার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) গবেষণাগারে।
সোমবার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়ণ করে এ গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে SARS-CoV-2 বা নোভেল করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স বা জীবন রহস্য উন্মোচন করার জন্য ১০টি নমুনা পাঠানো হয় ঢাকার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসাআইআর) ঢাকায়। এরপর বিসিএসআইআর-এর গবেষক ড. মো. সেলিম খান ও ড. মো. মোরশেদ হাসান সরকার এ গবেষণায় যোগ দেন।
জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা যায়, ১০টি নমুনার মধ্যে ছয়টিতেই ইউকে ভেরিয়েন্টের (B.1.1.7) উপস্থিতি রয়েছে। তিনটিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের (B.1.351) উপস্থিতি রয়েছে। তবে কোনো নমুনাতেই বর্তমানে ভারতে চিহ্নিত ভেরিয়েন্টের (B.1.617) উপস্থিতি নেই। একটিতে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার ভেরিয়েন্ট।
মার্চ ও এপ্রিলে আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সের রোগী থেকে নমুনাগুলো নেওয়া হয়েছিল। আক্রান্ত রোগীদের পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। তার মধ্যে ইউকে ধরনের তিনজন রয়েছেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকার ও অপরজন অস্ট্রেলিয়া ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন।
সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, 'যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে চট্টগ্রামের করোনার ধরনে মিল পাওয়া গেছে। তবে ভারতের সঙ্গে মিলেনি।'
এর আগে ৫ এপ্রিল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে 'Fear of new Covid strains grows amid lack of research' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে স্বাস্থ্য বিভাগের বরাতে চট্টগ্রামে করোনার যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলিয়ান ও আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের উপস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল।
চট্টগ্রামে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু হয় মার্চ মাস থেকে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয় এপ্রিলে। মার্চ মাসে মোট শনাক্ত ছিল ৫ হাজার ২৮৪ জন। মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ১৩ জনের। এপ্রিলের প্রথম দিনেই রেকর্ড ৫১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ৮ দিন পর ৯ এপ্রিল এক দিনে আবারও সর্বোচ্চ রেকর্ড, শনাক্ত হয় ৫২৩ জন। দৈনিক এবং মাসভিত্তিক মৃত্যুতেও এপ্রিল আগের সব সংখ্যা ছাড়িয়ে যায়। ২৫ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১১ জন করোনায় মারা যান। শেষ পর্যন্ত এক মাসে মারা যান রেকর্ড ১৩৬ জন।