চট্টগ্রামে পাঁচ বছরে পশু উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ
আসন্ন ঈদুল আযহা বা কোরবান উপলক্ষে চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ছয় লাখ ৮৯ হাজার পশু (গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া)। চলতি বছর জেলায় মোট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত লাখ ৩০ হাজার। সে হিসেবে লক্ষমাত্রার ৯৪ শতাংশ পশু উৎপাদন নিশ্চিত হয়েছে।
২০১৫ সালে চট্টগ্রামে উৎপাদন ছিল তিন লাখ ২০ হাজার পশু। উৎপাদনের পরিমাণ হিসেবে গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে পশু উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাজারে মানুষের আনাগোনা কম হলে ভালো দাম পাওয়ার আশা নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন খামারীরা। তারা মনে করছেন, যারা বড় গরু কেনে তারা করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাজারে আসবে না। ফলে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম হলে দাম কমে যাবে।
অন্যদিকে খামারীরা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করতে পারে সেজন্য বাজারের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে পশু সম্পদ অধিদফতর। তারা বলছে, পশু বেচা-কেনা কমবে না। তবে আগের মতো একটি গরু কিনতে যেমন ৫-৬ জন লোক আসত; তা এবার দুইজনে নেমে আসবে।
গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় উৎপাদনকৃত পশু দ্বারা কোরবানি করা হচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় এবং গরুর ভালো দাম পাওয়ার কারণে অনেকে এগিয়ে আসছেন পশু পালনে। ফলে চাহিদার সমান নিজস্ব সরবরাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল ইসলাম বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পশুর যোগান আছে চট্টগ্রামে। যেগুলো কম রয়েছে তা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসা পশুর মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হবে। করোনা পরিস্থিতিরি কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান এবং হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় বাড়তি পশু যোগ হয়েছে কোরবানিতে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষ যেন হাটে আসতে পারে সেজন্য আমরা গরুর বাজার বেশি রাখার জন্য বলছি। সরকার গত বারের মতো এবার ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রান্তিক কৃষক ও খামারীরা এ ক্ষেত্রে লাভবান হবে। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গরু লালন পালন করছে। যা দেশীয় উৎপাদন বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের হিসাব মতে, এবার কোরবানিতে পশুর চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৩০ হাজার। মোট পশুর উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে গরু চার লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৩টি, মহিষ ৪৪ হাজার ১৭৭টি, ছাগল-ভেড়া এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৬টি।
২০১৯ সালে সাত লাখ ১০ হাজার ২১৯টি পশুর মধ্যে গরু ছিল চার লাখ ১৪ হাজার ৩৮৭টি, মহিষ ৪৮ হাজার ২৮৪টি, ছাগল ও ভেড়া ছিল এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৪৮টি।
২০১৮ সালে মোট পশুর উৎপাদন ছিল পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। এর মধ্যে গরু তিন লাখ ৯৫ হাজার ৫০৩টি। ২০১৭ সালে মোট উৎপাদিত পশু ছিল তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। ২০১৬ সালে তিন লাখ ৩৬ হাজারটি এবং ২০১৫ সালে ছিল তিন লাখ ২০ হাজার।
জানা যায়, কোরবানিকে ঘিরে চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা এবং মেট্রো এলাকার তিনটি থানার চার হাজার ৭৭৮ জন খামারী এসব পশু লালন-পালন করেছেন। খামারীদের মধ্যে সীতাকু-ে ১৪০ জন, সন্দ্বীপে ৯০ জন, ফটিকছড়িতে ২৭০ জন, রাউজানে ২৬৪ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২২৫ জন, হাটহাজারীতে ৩০৩ জন, বোয়ালখালীতে ১৬৯ জন, পটিয়ায় ৫৩৯ জন, চন্দনাইশে ৫৬০ জন আনোয়ারায় ৪০০ জন, সাতকানিয়ায় ২২৫ জন, লোহাগাড়ায় ৪৫০ জন, বাঁশখালীতে ১৬৯ জন, কর্ণফুলীতে ৪৭৫ জন, কোতোয়ালীতে ৭৫ জন, ডবলমুরিংয়ে ৮৪ জন এবং পাঁচলাইশ এলাকায় ৭৫ জন এসব পশু লালন পালন করেছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, চট্টগ্রামে মেজবান উপলক্ষে প্রতি মাসে কমবেশি তিন হাজার গরু ও পাঁচশ মহিষ জবাই করা হয়। এই হিসাবে শুধু এক দিনেই শতাধিক গরু-মহিষ জবাই করা হয়। ১৯ মার্চ থেকে এ আয়োজন বন্ধ থাকায় জমা রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার গরু-মহিষ। এ ছাড়া ১২ আউলিয়ার এলাকা হিসেবে পরিচিত পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে রয়েছে অসংখ্য আউলিয়া ও পীর-বুজুর্গ'র মাজার। তাদের জন্ম-মৃত্যু দিবসে গরু-মহিষ জবাই করে ফাতিহা বা ওরসের আয়োজন করে ভক্তদের খাওয়ানো হয়। এবার তাও ছিল বন্ধ।
প্রতিবছর নিজস্ব ডেইরি ফার্ম থেকে উৎপাদিত আট থেকে ১০টি ষাড় বিক্রি করেন চট্টগ্রাম জেলা ডেউরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ ওমর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত গরুর দাম ঠিক আছে। কিন্তু করোনার কারণে মানুষের যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তার একটা প্রভাব পড়বে কোরবানিতে।
''তাছাড়া অনেকে ভয়ের কারণে বাজারমুখী নাও হতে পারে। ফলে বাজারে গরুর চেয়ে ক্রেতা কম হলেও তার একটা প্রভাব পড়বে দামে। তাই এবার পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও ভালো দাম পাবো কি না তা নিয়ে বিপাকে আছি আমরা'', যোগ করেন তিনি।