চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধা
খুলনায় করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত হোটেল মিলেনিয়ামে বিনা নোটিশে ছয় চিকিৎসককে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার খুলনা জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ওই ছয়জন করোনা চিকিৎসককে হোটেল মিলেনিয়ামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য খুলনার চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয় জেলা প্রশাসনের। মৌখিকভাবে রাজি হয় তারা।
করোনা হাসপাতাল ও সিএসএস আভা সেন্টার থেকে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালে ১০ দিন টানা কাজ শেষে ১৪ দিনের জন্য হোটেল রয়্যাল, মিলেনিয়াম ও অ্যাম্বাসেডরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালন করেন। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ছয়জন চিকিৎসক নগরীর বয়রায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে হোটেল মিলেনিয়ামে কোয়ারেন্টিনের জন্য গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর তারা চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত হোটেল অ্যাম্বাসেডরে যান।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী রেজা সেকেন্দার বলেন, গত এপ্রিলে জেলা প্রশাসন বৈঠকের মাধ্যমে হোটেল মিলেনিয়ামে চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য নির্ধারণ করে দেয়। তার পর থেকে গত দু'মাস চিকিৎসকরা সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গত সোমবার হঠাৎ করে আমাদের জানানো হয়, হোটেল থেকে নেমে যেতে হবে। আমরা কয়েক দিন সময় চাই এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানানোর কথাও হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়। কিন্তু কোভিড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে আমাদের চিকিৎসকরা সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি নিজে গিয়েও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে তারাও অনেকক্ষণ চেষ্টা করে না পেরে নগরীর ডাকবাংলো এলাকার হোটেল অ্যাম্বাসেডরে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেন। এরপর সেখানে আমাদের চিকিৎসকদের রেখে আসা হয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে এমন আচরণ করলে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে।
এদিকে, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের রাখার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের কথা না থাকলেও হোটেল মিলেনিয়াম তাদের থাকা বাবদ খুলনা মেডিকেল কলেজকে (খুমেক) ২৩ লাখ টাকার বিল পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে হোটেল মিলেনিয়ামের মালিক সরফুজ্জামান টপি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি সাত বছর আগে হোটেলটি একজনকে পরিচালনার জন্য ভাড়া দিয়েছিলাম। জানুয়ারি থেকে তিনিও আর হোটেলটি চালাতে চাচ্ছিলেন না। জেলা প্রশাসন থেকে হোটেলটি ব্যবহারের কথা বললে তিনি রাজি হয়ে যান। কিন্তু পুরো হোটেলে কোনো কর্মচারী নেই, শুধু দুজন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। এ অবস্থায় যদি সেখানে অবস্থান করা কারও কোনো সমস্যা হয়ে যায়, তাহলে তার দায় কে নেবে?'
অপরদিকে, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত হোটেল মিলেনিয়াম থেকে বিনা নোটিশে ছয় চিকিৎসককে বের করে দেওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার খুলনা জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।