জাল কাগজের বানান ভুলে ধরা হাজার কোটি টাকার প্রতারণা, রিমান্ডে যুবলীগ নেতা
সহজ শর্তে দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে বড় অংকের লোন অনুমোদন ও সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে যুবলীগ নেতা মো: রাব্বি শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল ও তার দুই সহযোগীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্লাল হোসেন তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল।
বুধবার বিকেলে দুই সহযোগীসহ শাকিলকে গ্রেফতার করে বগুড়া পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তারা হলেন- প্রতারণার জন্য তৈরি করা তার প্রতিষ্ঠানে আইটি এক্সপার্ট একই উপজেলার কুসুন্দি গ্রামের হুমায়ন কবির (২৮), ম্যানেজার নওগাঁর মান্দার গাড়িক্ষেত্র গ্রামের হারুনর রশিদ সাইফুল (২৬)। গ্রেফতার করার পর রাতেই তাদের বগুড়ায় আনা হয়।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বাড়ি যুবলীগের সহ-সভাপতি ডিজে শামিমের। তার বাবা কাজী গোলাম মোস্তফা হলেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি।
'ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিস' নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে প্রতারণা করতো ডিজে শাকিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভুঁইয়া এসব তথ্য দিয়ে জানান, শাকিলের কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ২টি এবং ২০০ কোটি টাকার আরেকটি চেকসহ মোট এক হাজার ২শ কোটি টাকারও বেশি মুল্য মানের ৩৬টি চেক পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও চেকের পাতা পাওয়া গেছে কয়েকটি যাতে রয়েছে সাক্ষর।
জাল কাগজের বানান ভুল থেকে প্রতারণা কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে
গত ১২ই আগস্ট প্রতারণার শিকার বগুড়ার ব্যবসায়ী মো: আমানত উল্লাহ তারেক বগুড়া সদর থানায় তার নামে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় অংকের লোন প্রয়োজন হলে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি ডিজে শাকিলের ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লোন নেয়ার প্রস্তার করলে তার কাছ থেকে নানা কৌশলে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ডিজে শাকিল।
পরে টাকা তোলার জন্য তিনি শাকিলের কাছে চেকের মূল কপি চাইলে তারা আজ দেবে কাল দেবে বলে তালবাহানা করে। বিষয়টিতে সন্দেহ হওয়ায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, বগুড়া শাখায় গিয়ে চেক দুইটির প্রিন্ট কপি দেখালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ 'গণপ্রজাতন্ত্রী' বানান ভুল এবং চেক দুইটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করে। এরপর তারেক পুনরায় যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বগুড়া শাখায় গিয়ে শাকিলের প্রদত্ত লোন স্যাংশন লেটার ও চেকের স্ক্যান কপি দেখালে যুব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও স্যাংশন লেটার ও চেকের স্ক্যান কপিটি ভুয়া এবং স্বাক্ষর তাদের কর্তৃপক্ষের নয় বলে নিশ্চিত করে।
পুলিশ জানায়, শাকিল অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল ও বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো।
এই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আদালতে তোলা হবে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম আলী। জানান বেশ কিছুদিন ধরেই মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল ডিজে শাকিল।
ওসি আসলাম আলী জানান, তাড়াশে তার ব্যক্তিগত অফিস থেকে তাকে গ্রেফতারের সময় কয়েকটি কম্পিউটার, চেক বই, সেল ফোনের সিম, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
এসবের মধ্যে আছে- সরকারি সিল মোহর ও প্যাড ব্যবহার করে তৈরি করা বেশ কিছু ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয় ডি.জে শাকিলের অফিস থেকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর বাঘমারার বাবুলুর রহমানের নামে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তৈরি মিটার রিডার কাম ম্যাসেনজারের ভুয়া নিয়োগপত্র, নাটোরের গুরুদাসপুরের আরিফুল ইসলামের নামে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের ভুয়া নিয়োগপত্র, বগুড়ার হাজরাদীঘি তেলধাপ গ্রামের নাজেম উদ্দিনের নামে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দফতরী কাম প্রহরীর ভুয়া নিয়োগ পত্র ও রংপুরের বদরগঞ্জের দক্ষিণ বাওচন্ডি গ্রামের চাঁদ বাবুর নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিস সহায়ক পদের ভুয়া নিয়োগপত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল জানিয়েছে একেকটি ভুয়া নিয়োগে সে ৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে।