টিকা নিতে গিয়ে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ মামলার আসামি!
ঝালকাঠি রাজাপুর থানার আদেখোলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম খান কাজ করেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে। মাঝে মাঝে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে-সময় কাটাতে ঢাকায় আসেন। গত ১৬ আগস্ট ছুটি নিয়ে অন্যান্যবারের মতো এসেছিলেন ঢাকায়। নিজ জেলা ঝালকাঠির পরিচিত থাকায় উত্তরার একটি টিকা কেন্দ্র থেকে গত মাসে কোভিডের প্রথম ডোজ টিকাও নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। গত ১৭ আগস্ট সকালে উত্তরার কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের কারণে আটকা পড়ে যান। বাস থেকে নেমে হেঁটে সামনের দিকে যেতে চাইলে সন্দেহভাজন হিসেবে বিএনপির অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাকেও আটক করা হয়। খোঁজ-খবর না পেয়ে পরিবারের লোকজন পুলিশে যোগাযোগ করলে, পরে জানা যায় তিনি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন।
পরদিন মঙ্গলবার ১৫৩ জন বিএনপি নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত ২-৩ হাজার জনকে আসামি করেন মামলা দায়ের করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ, যাতে তরিকুল ইসলাম খানকে ২৬ নম্বর আসামি হিসেবে পুলিশের সদস্যদের আহত করা, হামলা, ভাংচুর ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়।
তরিকুলের ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পুলিশ আটক করার সময় ভাইয়ার কাছে টিকা কার্ডও ছিল। তিনি কয়েকবার পুলিশকে বোঝানোরও চেষ্টা করেছেন। পুলিশ কোন কিছু না শুনেই তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে শেরেবাংলা নগর থানা ও তেঁজগাও বিভাগ পুলিশ যোগাযোগ করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।"
"কিন্তু সকালে শুনি তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এবং পরে আদালতে তোলা হয়। এরকমভাবে একটা মানুষ মামলার আসামি হয়ে গেল, দেশে কি কোন ন্যায়বিচার নেই?"
ঝালকাঠি'র রাজাপুরের ৫ নম্বর বড়ইয়া ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবউদ্দিন সুরু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ১৮ আগস্ট দেয়া এক প্রত্যয়নপত্রে বলেন, "আদাখোলা গ্রামের রুস্তম আলী খানের ছেলে তারিকুল ইসলাম খান ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়া তাকে কখনো আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য কোন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমাদের জানামতে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কোন কাজে জড়িত নন।"
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবউদ্দিন সুরু মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারিকুল ইসলাম খান একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার একদিন আগে ঢাকা গিয়েছিল।
"ঘটনার দিন সকাল সে এক আত্মীয়'র বাসা থেকে উত্তরার একটি কেন্দ্রে করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালে আগারগাঁও হয়ে তার বাস বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছালে এমন সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। সে সময় বাস থেকে নেমে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঘটনার মধ্যে পড়ে যান তরিকুল। পরে, পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে।"
এই প্রতিবেদক বুধবার দুপুরে ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গেলে এই মামলায় আসামি হওয়া দুইজন বিএনপি নেতার সাথে কথা বলেন। ওই দুইজন নেতাও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান যে, তারা তরিকুল ইসলাম খান নামে কাউকে চেনেন না, এই নামে তাদের মহানগর কমিটিতেও কোন কর্মী নেই।
ইউনিটি থ্রো পপুলেশন সার্ভিস (ইউপিটিএস) এর অফিস সহকারী মো. ওবায়দুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, মঙ্গলবার সকাল দশটার সময় তরিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়।
"যখন তার সঙ্গে আমার কথা হয়, বলছিল আগারগাঁওয়ের কাছাকাছি কোন এক জায়গায় আছেন, আসতে আরো ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগতে পারে। এরপর অনেকবার কল করেও পাইনি। পরে শুনলাম তিনি নাকি বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আটক হয়েছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।"
তিনি বলেন, গত ১৬/১৭ জুলাই উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ইউনিটি থ্রো পপুলেশন সার্ভিস (ইউপিটিএস) থেকে তরিকুল ইসলাম খান কোভিডের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ১৭ আগস্ট তার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আসার কথা ছিল।
তরিকুল ইসলাম ফরিদপুরে যে বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতেন তার আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, "তরিকুল ঢাকা থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ছুটি শেষে আবার ফরিদপুরে কাজ যোগ দেয়ার কথা ছিল। সে কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও শুনিনি।"
তবে, এসব বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এছাড়া মামলায় আসামিদের বেশিরভাগের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদ-পদবী উল্লেখ থাকলেও তরিকুল ইসলামের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলরা বাদী শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক প্রবীর রঞ্জন ধর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা ঘটনার সময় চন্দ্রিমা উদ্যান ও বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে প্রায় ৪৭ জনকে আটক করেছেন, তাদেরকে পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
"অনেককেই আটক করা হয় ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে, কাউকে তো আর পদ-পদবী দেখে আটক করা হয়নি। অনেকে এখানে বেড়াতেও আসতে পারেন। তবে এরকম একটি আনটুয়ার্ড সিচুয়েশনে কেউ বেড়াতে আসবেনই বা কেন?"