ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিক তানুর বাবার প্রশ্ন 'সাংবাদিকতা কী অবস্থায় দাঁড়িয়েছে'
হাসপাতালে করোনা রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১০ জুলাই) রাত ৮টার দিকে থানায় তথ্য সংগ্রহের কাজে গেলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসির রুম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজ।
মামলাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(ক) ২৫(১)(খ) ২৯(১)/৩১(১)/৩৫(১) ধারায় রেকর্ড করা হয়। মামলাটিতে তানভির হাসান তানুকে প্রধান আসামী করে তিনজনকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সাংবাদিক তানু দৈনিক ইত্তেফাক, ইন্ডিপেন্ডেট টিভি ও জাগোনিউজ২৪.কমের জেলা প্রতিনিধি। অপর দুই সাংবাদিক হলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা২৪.কমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
সদ্য করোনা আক্রান্ত থেকে রিপোর্ট নেগেটিভ আসা তানভির হাসান তানুকে গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ পরই থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই সাংবাদিক। সেখান থেকে তাকে হাতকড়া বেস্টনীর মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে রাখে থানা পুলিশ।
রোববার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টার সময় হাসপাতাল থেকে সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এদিকে, আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই সাংবাদিকের মা ও বাবা।
সাংবাদিক তানুর মা রানী আখতার বলেন, "আমার ছেলে কোন অন্যায় করেনি। সে সৎ পথে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার কাজ করছে। একটি সত্য সংবাদ প্রকাশ করে যদি আমার ছেলেকে জেলে যেতে হয় এর থেকে বড় কষ্ট নেই। আপনারা সকলে আমার ছেলেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিন। সারা দেশের সাংবাদিকের কাছে আমার দাবি আমার ছেলের জন্য কিছু করুন।"
তানুর বাবা আবু তাহের বলেন, "আমার ছেলে বেশ কিছুদিন ধরেই করোনায় আক্রান্ত ছিলো। সবেমাত্র সে সুস্থ হয়েছে তবে এখনো দুর্বলতা কাটেনি,"
"একজন সাংবাদিককে যদি সঠিক কথা লিখে যদি জেলে যেতে হয় তাহলে দেশে সাংবাদিকতা কী অবস্থায় দাঁড়িয়েছে?" প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এই পরিবারের বড় ছেলে সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগ জানান, "ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সরবারহ করা খাবারের মান নিয়ে তানু একটি সংবাদ করেছে। সেই সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই এই মামলাটি করা হয়েছে। তানু অসুস্থ, সদ্য করোনমুক্ত হয়েছে। এখনো তার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। রাতেও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় থানা পুলিশ। হাসপাতালের বেডেও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। আমি তানুকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।"
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ বাদি হয়ে শুক্রবার তিনজন সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে সদর থানার ওসির রুম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তানু মামলার মামলার প্রধান আসামি।
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর থেকেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সারাদেশের সাংবাদিকরা। সকলেই সাংবাদিক তানুকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব সাংবাদিকরা গত রাতেই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।