ডিজেলের গাড়ি হোক বা না হোক, সব গণপরিবহনেই ভাড়া বাড়তি
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী চলা তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘট শেষে সোমবার সকাল থেকে ২৭% বর্ধিত ভাড়ায় সড়কে চলার কথা গণপরিবহনগুলোর।
গ্যাসচালিত বাহনের জন্য নতুন এ ভাড়া প্রযোজ্য না হলেও রাজধানী ঢাকার প্রায় সব গণপরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
সোমবার সকালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদদাতা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখতে পান, কিছু বাস কোম্পানি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার হার লঙ্ঘন করে ৫০ শতাংশ পর্যন্তও ভাড়া বাড়িয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল প্রভৃতি এলাকার যাত্রীরা জানান, ডিজেলচালিত হোক বা না হোক, সব বাসই বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।
গাবতলী এলাকা থেকে ৮ নম্বর বাসে চড়ে সকালে বাংলামোটরে পৌঁছান কামাল গাজী।
তিনি বলেন, "সাধারণত এই দূরত্বের জন্য আমি ২০ টাকা দিয়ে থাকি। কিন্তু আজ আমার বাস সিএনজি চালিত বাহন হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ২৫ টাকা খরচ করতে হয়েছে"।
গতকাল রোববার বাস মালিকদের সাথে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বৈঠক শেষে মহানগরের অভ্যন্তরে ও দূরপাল্লার বাস ভাড়া যথাক্রমে ২৬.৫ ও ২৭ শতাংশ বাড়ায় সরকার। সেখানে বলা হয়, সিএনজি চালিত যানবাহনের জন্য নতুন ভাড়া প্রযোজ্য নয় তবে বেশিরভাগ গণপরিবহনই সরকারী নির্দেশ মানছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকল্প অটো সার্ভিসেস নামক বাস কোম্পানির সুপারভাইজার রফিক বলেন, সরকার বাসের ভাড়া বাড়ানোয় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছেন।
তাহলে সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে তাদের কোম্পানি ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, "আমাদের কোম্পানি নতুন যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে সে অনুযায়ীই আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।"
পবিত্র দাস নামে এই বাসের এক যাত্রী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "আমাদের এখন মাত্র ২ কি.মি. যাতায়াতের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হবে। ভোগান্তিটা শুধু আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরই।"
৫০ টাকা বর্ধিত ভাড়ায় লক্ষ্মীপুরের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাস চলাচল
এদিকে লক্ষ্মীপুরের আন্তঃনগর বাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের অতিরিক্ত ৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী জোনাকি পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, "আগে ভাড়া ছিল যাত্রীপ্রতি ৩০০ টাকা। এখন ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।"
আবার ঢাকা রুটে চলাচলকারী ইকোনো পরিবহনের সুপারভাইজার শাহ আলম বলেন, "আগে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা।"
৫০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রামগামী যাত্রী মো. আহছান উল্যাহ বলেন, "বাস সার্ভিস আবার চালু হলেও ভাড়া বেড়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শুধু যাত্রীদের।"
'ভাড়া বেশি নিচ্ছে, কিন্তু কিছু করার নাই'
খুলনা থেকে আঞ্চলিক রুটে ভাড়া বেড়েছে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর রোববার রাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালসহ নগরীর বিভিন্ন কাউন্টার থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থেকে মোংলা রুটে যাত্রী প্রতি পরিবহনের ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০ টাকা। এছাড়া খুলনা-কুষ্টিয়া রুটে ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২০ টাকা, খুলনা-যশোর রুটে ভাড়া ছিল ৯০ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। খুলনা-সাতক্ষীরা ছিল ১০০টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। ধর্মঘটের পর রাস্তায় পরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় দূরে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেও বাড়তি ভাড়ায় ক্ষিপ্ত যাত্রীরা। বেশি ভাড়া গুনতে হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনালে বরিশাল রুটের যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। এখন নিচ্ছে ৩০০ টাকা। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা মেনে নেওয়া কঠিন।