ঢাকার বাইরে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে
ঢাকা বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সব সময় বেশি ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে বিশেষ করে চট্টগ্রামে মৃত্যু বাড়ছে।
পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে না হলে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০ মে প্রথমবারের মত ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। সেদিন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ১৪ জন ছিল চট্টগ্রামের ও ১২ জন ঢাকার। বাকী ১০ জন অন্যান্য বিভাগের ছিলেন।
গত এক সপ্তাহে (২১-২৭ মে) দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯৬ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৫৭ জন ও ঢাকায় ৫৩ জন। এরপরে মৃত্যু বেশি খুলনায় ও রাজশাহীতে। এই দুই জেলায় গত এক সপ্তাহে ২৫ ও ২০ জন মারা গেছেন।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মো. মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ঢাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। ঈদে ঢাকার বাইরে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংক্রমণ বেড়েছে সে কারণে সেখানে মৃত্যু বাড়তে পারে। এছাড়া রাজশাহীতে কোভিড রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু বাড়তে পারে'।
চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি টিবিএসকে বলেন, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় ও কোমর্বিডিটি থাকায় মৃত্যু বাড়ছে। তবে চট্টগ্রাম শহরে মৃত্যু কম, তবে পজেটিভিটি রেট ১০% এর বেশি। কিন্তু কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের পর সংক্রমণ বেড়েছে। ঈদ পরবর্তী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি আমরা আরো দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখব'।
জাতীয় পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হার ৮% হলেও সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ হার ১০-৪০% মধ্যে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ৩৭টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হার রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনায়। ২০ থেকে ২৯ শতাংশ সংক্রমণ হার সিলেট, ঝালকাঠি, রাজশাহী, নাটোর ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং ফরিদপুরে।
এছাড়া দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, রংপুরসহ আরো ২৩ জেলায় সংক্রমণ হার ১০% থেকে ১৯%।
এদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ মে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধু্রী জানান, 'বৃহস্পতিবার চাপাইনবাবগঞ্জের সংক্রমণ হার ছিল ৪৩%, কয়েকদিন পর সংক্রমণ হার ৫০% এর নিচে নেমেছে। লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল কম থাকায় সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে আরো ১৪ দিন পর পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে'।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ১২ হাজারের কাছাকাছি। এ পর্যন্ত দেশে ১২ হাজার ৪৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার গ্রাফ গত মাসের তুলনায় এ মাসে কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। গত এক বছরে যত মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ১ হাজার ২৯২ জনের দেহে। তবে বর্তমানে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যাও কিছুটা কম।
মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৫ জনে। সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভে গত মাসে সংক্রমণের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও লকডাউনের পর এ মাসে শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, 'সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অবৈধ প্রবেশকারীদের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। তাই সংক্রমণ রোধে ভারত ফেরত সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ দায়িত্ব দিতে হবে। ভারত ফেরতদের ভয় না দেখিয়ে বুঝিয়ে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোভিড টেস্ট অনেক বাড়াতে হবে'।
ডিজিএইচএস এর মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমানে জেলা পর্যায়ে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এই হার কিছুটা বেশি। এক্ষেত্রে দেশবাসীকে একটু ধৈর্য ধরে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে'।
সীমান্তবর্তী আর কোনও জেলায় লকডাউন দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। যেখানে পরিস্থিতি যেমন হবে, সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্যকে নিরাপদ করার জন্য যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার। আর এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোনও সুযোগ নেই'।