ঢাকায় আবারও মৃত্যু বাড়ছে
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে জর্জরিত দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো। রাজধানীকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষিত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। তা সত্ত্বেও ফের ভাইরাসটির সংক্রমণ ও মৃত্যুর হটস্পট হয়ে উঠছে ঢাকা।
গত ২২ জুন কোভিড সংক্রমণের চেইন ভাঙার জন্য ঢাকার চারপাশের সাত জেলায় লকডাউন দিয়ে দেশের বাকি সব অঞ্চল থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। পরে সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকলে ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়। সেই লকডাউন এখনও চলছে।
আজ সারা দেশে, সম্ভবত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কারণেই, কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই কমেছে।
তবে গত চব্বিশ ঘণ্টায় সারা দেশে মৃত্যু কিছু কমলেও, ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা এখনও বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৭০ জন মারা গেছেন, খুলনায় মারা গেছেন ৫১ জন। শনিবার দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৭২ জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহীতে ১৩ জন, বরিশালে ১০ জন, সিলেটে সাতজন, রংপুরে ১১ জন এবং ময়মনসিংহে ৩ জন মারা গেছেন।
জুলাইয়ের প্রথম দশ দিনে ঢাকায় মারা যান ৪২০ জন, অথচ জুনের প্রথম দশ দিনে মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৮৯ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আতঙ্কজনক বিষয়। আসন্ন ঈদ-উল-আযহার সময় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোস্তাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'ঢাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া অবশ্যই আতঙ্কের বিষয়। ঢাকার আশপাশের রোগী এবং রোগীদের সঙ্গে লোকজন আসার কারণে এ সংখ্যা বাড়ছে। আর কোনো স্থানের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তে থাকে।'
ড. মোস্তাক ঈদ-উল-আযহার সময় ঈদের নামাজের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন সবাইকে।
সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে না নামলে চলমান কঠোর বিধি-নিষেধ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান আইইডিসিআর-এর সাবেক এ কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'ঢাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকায় দুই কোটি লোক বাস করে। এতটুকু একটা শহরে এত মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে বেশি সময় লাগে না।'
তিনি আরও বলেন, ঢাকার এ সংক্রমণ সামনের দিনগুলোতে কতটা ছড়াবে সেটা ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে এটা নগরবাসীকে বেশ ভোগাবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আইসিইউয়ের জন্য চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এখন প্রত্যেক হাসপাতালে একটি বেডের বিপরীতে আইসিইউয়ের জন্য ২০-২৫ জন রোগী অপেক্ষায় থাকছেন। রোগী সুস্থ হলে বা মারা গেলেই কেবল আইসিইউ বেড খালি হয়। এবারের ঢেউয়ে রোগীদের আইসিইউতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় থাকতে হচ্ছে। আগে ১০-১২ দিন, অর্থাৎ দুই সপ্তাহের কম সময়ে রোগীরা সুস্থ হতেন। কিন্তু এখন ১৫-১৬ দিন, এমনকি ২০ দিনও থাকতে হচ্ছে আইসিউতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড ২৭টি হাসপাতালের মধ্যে ডিএনিসিসি'র কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড খালি নেই।