ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ডাকসু ভিপি নুরের
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হলে সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে একটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন থেকে এ কথা বলেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার সময় কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামেন। এর পরপরই তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
রাত পৌনে একটার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বিক্ষোভ শুরু হয় ক্যাম্পাসে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার দাবিতে রাতে দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ করে বিভিন্ন সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র মো. সিফাতুল ইসলাম ভোর চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন।
ধর্ষকের বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজু ভাষ্কর্যে পুনরায় সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। একই সময়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্রদল।
দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ১২টি সংগঠনের জোট ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘আমাদের বোন ধর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে ছাত্র প্রতিনিধিরা আন্দোলনে নেমেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। আমরা চাই ধর্ষকদের অবশ্যই চিহ্নিত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলন সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
নুরুল হক নুর বলেন, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। একটা কথা বলা হয় যে, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এটাকে বলা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এখনও নারীরা, আমার বোনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘর থেকে বের হলেই তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে।
‘আমরা দেখেছি বিরোধী দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কারণে চার সন্তানের জননী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনায় সারাদেশ উত্তাল হলেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। পরে ওই ঘটনার বিচার করেনি। ডাকসুতে যখন হামলা হলো সরকার বলল- তারা হার্ডলাইনে কিন্তু যারা ওই হামলার মূল কারিগর তারা কিন্তু মামলার আসামিও হয়নি। আমাদের দাবি থাকবে যেকোনো ঘটনায় যারাই প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেপ্তার করুন। মনে রাখবেন আজ ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় কিন্তু ঢাবি শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে।’
এ সময় ডাকসুতে হামলায় সরকারের ইন্ধন ছিল বলে দাবি করেন নুর। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা। সেখানে ছাত্রদের নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপির রুমে ঢুকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। অথচ ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, ওই ঘটনায় সরকারের ইন্ধন ছিল। কিংবা ইশারা ছিল। নইলে ছাত্রলীগ ওই হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখাত না। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধে বিচার যদি না হয় তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। অন্য সরকার আসলেও অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।
আলামত সংগ্রহে মাঠে নেমেছে র্যাব ও ডিবি
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলামত সংগ্রহে মাঠে নেমেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাট্যালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা-ডিবি।
সোমবার সকালে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের বাইরের দিকে একটি ঝোপের মধ্যে কিছু ‘আলামতের’ সন্ধান পান তারা।
নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে র্যাবের এক সদস্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “ঝোপের মধ্যে ইউনিভার্সিটির বই, ঘড়িসহ কিছু আলামত আমরা পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটিই ঘটনাস্থল। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা আসলে বিস্তারিত জানানো হবে।”
গতকাল রাত থেকে কুর্মিটোলার আশেপাশের সব এলাকায় খুঁজে এই জায়গাটিকে সন্দেহ হয়েছে বলে জানান র্যাবের ওই সদস্য।
ডিবির একটি দলও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছে।