থমকে আছে রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসা সেবা
এক হাজার শয্যার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই কমছে রোগীর সংখ্যা। আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৭০০ থেকে ২৫০০ রোগী ভর্তি থাকতেন সেখানে আজ শুক্রবার রোগী আছেন মাত্র ৬৩০ জন। আগামী ২-৩ দিনে আরও ৩০০ রোগীর ছাড়া পাওয়ার কথা রয়েছে। নতুন রোগী ভর্তি না করায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, বড় কোনো সমস্যা ছাড়া তারা নতুন রোগী ভর্তি করছেন না। করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুপমেন্ট (পিপিই) না থাকায় তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
তবে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে জানিয়ে দায় এড়িয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।
৪০ ওয়ার্ডের হাসপাতালটির দুই নাম্বার ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন রোগী সেখানে রয়েছেন। বাকি বিছানাগুলো খালি পড়ে রয়েছে। যারা আছেন তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে আসা আরিফুল ইসলাম জানান, উন্নত চিকিৎসা নিতে তিনদিন আগে তিনি এখানে এসেছেন। তার কিডনি ডায়ালাইসিস করার কথা। কিন্তু কোনো চিকিৎসক ও নার্স না থাকার কারণে তার ডায়ালোসিস করা হয়নি।
তিনি বলেন, ''ডায়ালসিস না করলে আমি বেশিদিন বাঁচবো না।''
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী সুজা মন্ডল। তার স্ত্রী শাহীনা বেগম জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ আনুযায়ী একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তার স্বামীর সিটি স্ক্যান করিয়ে এনেছেন। কিন্তু কাকে দেখাবেন বুঝতে পারছেন না। কারণ এ ওয়ার্ডে এখন কোনো চিকিৎসক নেই। নার্স বা ওয়ার্ড বয়রা থাকলেও কেউ তাদের কাছে আসছেন না।
দায় স্বীকার করে হাসপাতালটির সিনিয়র নার্স শাহনাজ পারভীন বলেন, আমাদের এখানে পিপিই নেই। নিজেরা গাউন তৈরি করে কাজ করছি।
হৃদরোগ ইউনিটেরও অবস্থা একই। রোগী নেই। কর্তব্যরত নার্সরা নিজেরা গাউন তৈরি করে সেই গাউন পরে বসে আছেন। এছাড়া করোনারি কেয়ার ইউনিটের সিসিইউতে কোনো রোগী নেই।
ওই ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সানজিদা আখতার তরিনা জানান, চারপাশে করোনা আতঙ্ক। আমাদের কাছে পিপিই নেই। কোনো রোগীকে রিসিভ করার আগে তার শরীরে করোনা আছে কি-না তাতো আমাদের জানা নেই। তাই পিপিই ছাড়া তাদেরকে কীভাবে রিসিভ করবো।
তিনি পর্যাপ্ত পিপিই ও করোনা শনাক্তের কিট বরাদ্দের দাবি জানান।
এই ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাজমা বেগম বলেন, পিপিই না থাকায় আমি নিজেও নীল গাউন পড়ে কাজ করছি। কোনো রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার পর ওই গাউন পুনরায় ব্যবহার করার জন্য ওয়াশ করতে হচ্ছে। এভাবে কি হয়? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, করোনা আতঙ্কের কারণে আগের তুলনায় এমনিতেই রোগী অনেক কমে গেছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পিপিই না থাকায় চিকিৎসকসহ সেবাদানকারী সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। পিপিইর কারণে কয়েকদিন আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গিয়েছিল। সে সমস্যা এখন আপাতত নেই। সবার জন্য পিপিই পেতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।