দক্ষিণ এশিয়ায় যুব উন্নয়নে বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে
গ্লোবাল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-২০২০ প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিচ থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা সমতা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে দেশের দুর্বল কর্মদক্ষতার ইঙ্গিত দেয়।
লন্ডনের কমনওয়েলথ সচিবালয় থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত ত্রিবার্ষিক এই র্যাংকিং-এ ১৮১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১২৬তম স্থানে; দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু পাকিস্তান (১২৬ তম) ও আফগানিস্তানের (১৭৮ তম) চেয়ে এগিয়ে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ৮০ লাখ মানুষ নিট-এর (Not in Education, Employment, or Training–NEET) অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, বাংলাদেশে নিট-এর হার ৪০ শতাংশ, এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্ক হয়।
তাই তিনি অর্থনীতিতে এই দলকে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন।
সূচক সংকলনে ব্যবহৃত তথ্য কোভিড-১৯ মহামারির আগে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এখানে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশি যুবকদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে ১২.৪ শতাংশ; তবে এ অগ্রগতি যথেষ্ট ধীর গতির।
যদিও ২০১৮ সালে সামগ্রিক সূচকে বাংলাদেশ ০.৬১৬ স্কোরে উন্নীত হয়েছে, তবু এটি বৈশ্বিক গড় ০.৬৮০ স্কোরের নিচেই রয়েছে, যেখানে স্কোর-১-এ উন্নীত হওয়া যুব উন্নয়নের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়া, ২০১০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ০.৫৪৮।
যুব শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ ও উন্নয়নের দরুণ ০.৭৯৪-এর অসামান্য যুব উন্নয়ন স্কোর নিয়ে মালদ্বীপ দক্ষিণ এশিয়ায় সূচকের শীর্ষে এবং বিশ্বব্যাপী ৩৯তম স্থানে অবস্থান করছে।
শ্রীলঙ্কা ০.৭৪৭ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয় এবং বিশ্বব্যাপী ৬১তম স্থানে রয়েছে।
ভুটান, নেপাল ও ভারত এ অঞ্চলে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম এবং বিশ্বব্যাপী ৭৭তম, ৯৪তম ও ১২২তম স্থানে রয়েছে।
বিস্ময়করভাবে, তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে ৬৩ ধাপ এগিয়ে সূচকে ৬৩তম স্থানে অবস্থান করছে।
সূচকটি সামগ্রিক স্কোরের ওপর ভিত্তি করে যুব উন্নয়নের চারটি স্তর- অতি উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে; যেখানে বাংলাদেশ মধ্যম শ্রেণিতে পড়ে।
যুব উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে সিঙ্গাপুর; এরপরে স্লোভেনিয়া, নরওয়ে, মাল্টা ও ডেনমার্ক, অন্যদিকে, সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে চাদ প্রজাতন্ত্র।
যুব উন্নয়নের এই সূচক ছয়টি প্রধান ডোমেইন বা বিষয়, যেমন- শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সুযোগ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি, রাজনৈতিক ও নাগরিক অংশগ্রহণ এবং শান্তি ও নিরাপত্তা- এগুলোর ওপর ভিত্তি করে ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশগুলোর উন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা নির্ধারণ করেছে।
ওইসব ডোমেইনে বাংলাদেশের অবস্থান
সমতা ও অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষ দশটি দুর্বল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ০.৫৬১ স্কোর নিয়ে এ দেশের অবস্থান ১৭৪তম।
এই ডোমেইনের পাঁচটি নির্দেশক হলো- শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ (NEET), নিরাপত্তা, সাক্ষরতা, বাল্যবিবাহ এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকতার ক্ষেত্রে যুব লিঙ্গ সমতা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৬-২০১৭-এ দেখা যায়, দেশে নিট (NEET) যুবকদের সংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ।
কর্মসংস্থান ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষ ১০টি দুর্বল দেশের মধ্যে রয়েছে। এই ডোমেইনে ০.৫২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭২তম।
এই ডোমেইনে চারটি নির্দেশক হলো– নিটে যুবসমাজের অনুপাত, আংশিক বেকারত্ব, কিশোর প্রজনন হার এবং ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলা আছে যুবসমাজের এমন অংশ।
স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সূচকে ০.৮০৯ স্কোর নিয়ে দেশটি অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে (৪২তম) জায়গা করে নিয়েছে।
শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ০.৬৮১ স্কোর নিয়ে এ দেশের অবস্থান ১০৫তম।
২০১০ সাল থেকে যুব শিক্ষায় বাংলাদেশ ৪০.১৬ শতাংশ উন্নতির রেকর্ড গড়লেও এই ডোমেইনে ০.৭০৫ স্কোর নিয়ে ১১৬তম স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মহামারি-পূর্ব উন্নয়নগুলো ধরে রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই সকল ইতিবাচকতা বিপরীত দিকে ধাবিত হতে পারে।