দুই দেশের মধ্যকার সংযোগে জোর দিতে হবে: জয়শঙ্কর
ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের মধ্যকার কানেকটিভিটি তথা সংযোগ উন্নয়নের প্রতি ভারত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
একদিনের সফরে গতকাল (৪মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় আসেন এস জয়শঙ্কর।
ঢাকায় বিএএফ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ ব্রিফিংয়ে নিজের বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জয়শঙ্কর।
সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, " সম্পর্কের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা নিয়ে বর্তমানে দুই দেশ একযোগে কাজ করছে না"।
দু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার কথা বলেছেন এস জয়শঙ্কর।
"সামনে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে কানেকটিভিটি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সঠিক কানেকটিভিটি হলে পুরো অঞ্চলের ভূ-অর্থনীতির পরিবর্তন হবে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে এবং আমরা বিশ্বাস করি এটা সম্ভব। আমরা মনে করি তৃতীয় কোনো দেশকেও একীভূত করা যায়। বে অফ বেঙ্গলে কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে আমরা জাপানকে নিয়ে কাজ করতে পারি, কারণ জাপানের সাথে আমাদের উভয় দেশের চমৎকার সম্পর্ক আছে," বলেন জয়শঙ্কর ।
তিনি বলেন কানেকটিভিটির পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়ানো, যা দু দেশের সম্পর্কে অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করবে।
নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি ও অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশসহ সব ধরনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬-২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই মূলত ঢাকায় আসেন জয়শঙ্কর।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও ৫০ বছর যৌথভাবে উদযাপন করছে চলতি বছরেই।
এর আগে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় করেন।
দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে অপরাধ কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন এবং বলেছেন তাদের লক্ষ্য হলো- ''অপরাধ নয়, মৃত্যুও নয়''- সীমান্তের ক্ষেত্রে এ নীতির ওপর জোর দেয়া।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সময়সীমা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। খুব শিগগির আমাদের সচিবদের বৈঠক রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে নেবেন।
"আমি মনে করি, আপনারা এক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান জানেন, যা এখনো পরিবর্তন হয়নি।"
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, পানি বণ্টন, বাণিজ্য সংযোগ, বিদ্যুৎ ও করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি উন্নয়নে সমঝোতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তেজগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটি থেকে বিশেষ বিমানে জয়শঙ্কর ভারতে ফিরে গেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও সাক্ষাৎ করেন।