দেশ এখনও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, স্বীকার করলেন কৃষিমন্ত্রী
এতদিন দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার গল্প শোনালেও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক স্বীকার করলেন, প্রকৃতপক্ষে এখনো চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসেনি বাংলাদেশের। দেশের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের গল্প করেও, একটু মজার ছলে পেটুক বাঙালির বেশি পরিমাণে ভাত খাওয়াকেও দূষলেন। জানালেন, 'ভাত খাওয়া কমাতে পারলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।'
আজ শুক্রবার বিশ্ব খাদ্য দিবস- ২০২১ উপলক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (ইউএন-ফাও) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
আগামীকাল শনিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্বব্যাপী খাদ্য দিবস পালিত হবে। এবছর 'আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ- ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন' প্রতিপাদ্যে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও দিবসটি পালন করেছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'জাপানে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১০০ গ্রাম চাল খায়। সেখানে বাংলাদেশের একজন মানুষ প্রতিদিন ৩৮০ গ্রামেরও বেশি চাল খায়। এই ভাত খাওয়া কমাতে পারলে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চালের মোট উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন, যা রেকর্ড পরিমাণ। এক বছরে ৭ লাখ টন বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে, মোট ৩৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে বিশ্বে এখন তৃতীয় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ।
অথচ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪১৫ ব্যবসায়ীকে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ৩৩ লাখ টন উৎপাদন ও ১০ লাখ টন আমদানি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়েই কৃষিমন্ত্রী বললেন, 'ডিমান্ড বেশি হলে, সাপ্লাই কম থাকলে দাম বাড়বেই। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের একটি দুর্বল দিক হলো, হিউম্যান ও নন হিউম্যান কনজাম্পশন যেমন পোল্ট্রি, হাঁস-মুরগির খামার বা গরুকে কতটুকু চালের তৈরি খাবার বা ভাত খাওয়ানো হচ্ছে, তার হিসেব নেই। সব সময়ই বিবিএস ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদনের তথ্যে এক ধরনের ফারাক থাকে। এটা ঠিক করতে হবে। প্রতি বছর ২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে, বাড়িঘর তৈরি করে কৃষি জমি কমছে। এরপরও আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে যাচ্ছি।'
তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেশি হলেও তেমন একটা অস্বস্তি নেই বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কথাও স্বীকার করেন কৃষিমন্ত্রী। যে কারণে ঈশ্বরদীর ১০-১৫ টাকার শিম ঢাকায় এসে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি বলেন, 'এটি আমাদের দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা আমাদের দুর্বল দিক। এখন সবকিছুর দাম বেশি, মানুষের কষ্ট হচ্ছে।'
দুধ, ডিম, মাংসের উৎপাদনেও এখনো দেশের স্বয়সম্পূর্ণতা আসেনি বলেও মন্ত্রব্য করেন কৃষিমন্ত্রী। উৎপাদন কম থাকার কারণে চড়া দামে ব্রয়লার মুরগি খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে মাস-দুয়েকের মধ্যেই আবার উৎপাদন বাড়লে দামও কমে যাবে বলে জানান তিনি।
মাংসের দাম কমিয়ে আনতে হলে সরকারকে প্রাণিখাদ্যে ভর্তুকি দিতে হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। এই ভর্তুকির বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফাও প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বিশ্ব খাদ্য দিবস সম্পর্কে বলেন, 'আমরা পৃথিবীর ওপর অন্যায্য ও টেকসই নয় এমন চাপ প্রয়োগ করছি। আমাদের উচিত খাদ্য উৎপাদনের সময় পরিবেশকে সম্মান করা। একইসাথে, সকলে যেন নিরাপদ, পুষ্টিকর ও সুলভ মুল্যে খাদ্য পায়- তা নিশ্চিত করতে হবে।'
অবমুক্ত করা হবে -বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ (ব্রি-১০০):
এবারের খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে অবমুক্ত করা হবে নতুন একটি ধানের জাত। এই জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ (ব্রি-১০০)। একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি অবমুক্ত করবেন।
জাতটি বোরো মৌসুমের, যা উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ। এর প্রতি কেজিতে জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মি. গ্রাম, যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
এছাড়া চালের অ্যামাইলেজ ২৬.৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ। জীবনকাল ১৪৮ দিন এবং হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৭.৭ টন। এই ধানটি শুধু খাদ্যের চাহিদাই নয়, পুষ্টির অভাব পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে জানান মন্ত্রী।
আগামীকাল শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব খাদ্য দিবস নিয়ে দিনব্যাপী আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও ফাও। এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের ১০০ বছর' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। বইটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশ করেছে।