নতুন স্কুল ফিডিং প্রকল্প স্থগিত, আগের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লো ৬ মাস
স্কুল শিক্ষার্থীদের খাদ্য কর্মসূচীর সময় ২০২১ সালের জানুয়ারি – জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবছরের ডিসেম্বরেই এ কর্মসূচী শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশন ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নতুন খাদ্য কর্মসূচীর অনুমোদন দিতে দেরি হতে পারে এমন বিতর্কের মধ্যেই আগের কর্মসূচীর সময় ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে।
কর্মসূচীর পরিচালক রুহুল আমিন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তারা মহামারির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের বাসায় বিস্কুট সরবরাহ করেছেন।
"স্কুল শিক্ষার্থীদের খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রকল্পটির সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।" বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন কর্মসূচীর প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, তবে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন কর্মসূচী শুরু করতে ব্যর্থ হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
"নতুন বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশোধিত প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে, পরবর্তী অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনাটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হবে।" একারণে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে আরও চার- পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ এর আগেও আরও তিনবার বাড়ানো হয়েছিল। প্রথম দফায় ২০১৪ সালের জুলাই – ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের জানুয়ারি – ২০১৭ সালের জুন এবং ২০১৭ সালের জুন – ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি – জুন পর্যন্ত চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
২০০২ সালে প্রথম বারের মতো স্কুল-ফিডিং প্রকল্প শুরু করা হয়। যশোর জেলায় বন্যা কবলিত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেড় স্কুলে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর অর্থায়নে ৮৬টি উপজেলার ২৬ দশমিক ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এ কর্মসূচী হাতে নেয়।
বর্তমানে ১০৪টি উপজেলার ১৫ হাজার ৭৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ দশমিক ৬০ লাখ শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের অধীনে ৪ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর সহায়তা শুধু ১৪টি উপজেলার শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার সরবপ্রাহ করা হয়। বাকি উপজেলার শিক্ষার্থীদের ৩০০ ক্যালরি ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ৭৫ গ্রাম ওজনের বিস্কুট সরবরাহ করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিস্কুটের চেয়ে রান্না খাবার বেশি স্বাস্থ্যকর হওয়ায় ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ দশমিক ৪ কোটি শিক্ষার্থীদের জন্য রান্না খাবার সরবরাহের সরকার কাজ করছে বলে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মতে, সকলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যের যোগানে সব দেশেরই উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। স্কুল থেকেই পুষ্টির চাহিদা পুরণে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলেও জানায় এফএও।
বাংলাদেশসহ ৫২টি নিম্ন- মধ্যবিত্ত আয়ের দেশের ৩৪টি দেশেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় বা অন্যন্য সহায়তার মাধ্যমে স্কুল-ফিডিং কর্মসূচী চালু আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের তথ্যানুযায়ী, ৬- ১২ বছর বয়সী ৪০ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী অপুষ্টিতে ভোগে। ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ৬-৮ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১৬০০ ক্যালরি, ৭-৯ বছর বয়সী শিশুদের ১৯৫০ ক্যালরি ও ৯- ১১ বছর বয়সী শিশুদের ২২০০ ক্যালরি প্রয়োজন।
২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯-এর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাঁধুনিরা শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন একবেলা খাদ্য সরবরাহ করেন। দুই শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রথম শিফটে বেলা ১১টা ৪৫ ও দ্বিতীয় শিফটে দুপুর দেড়টায় টিফিন পিরিয়ডে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। শুধু একটি শিফটের ক্ষেত্রে টিফিন পিরিয়ডে খাদ্য সরবরাহ হয়।
স্কুল-ফিডিং প্রকল্পে রান্না করা ও খাদ্যের স্বাস্থ্যবিধি নজরে রাখার স্থানীয় নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি এবং বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত থাকেন।