নারী পাচারকারী দলের গ্রেপ্তারকৃত মূলহোতা দুবাইয়ে ৪ হোটেলের মালিক: সিআইডি
শত শত নারীকে কাজ দেওয়ার নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠিয়ে যৌনকর্মে বাধ্য করা নারী পাচারকারী দলের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
দুবাইয়ে ওই চক্রের মূলহোতা আজম খানের রয়েছে চারটি হোটেল। এরমধ্যে হোটেল ফরচুন রুয়েল, ফরচুন গ্র্যান্ড হোটেল ও সিটি টাওয়ার হোটেল চার-তারকা মানের এবং ফরচুন পার্ল হোটেল তিন-তারকা মানের।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, হোটেল ব্যবসার আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালানোর দায়ে সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত আজমকে দেশটি থেকে বের করে দিয়েছে।
সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগ মানব পাচার চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা টুরিস্ট ভিসায় তরুণীদের দুবাই নিয়ে যৌনকর্মে বাধ্য করত। গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ার হোসেন ও আল আমিনকে আজম খানের সহযোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও, কোথায় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানায়নি পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, আজম খানের নারী পাচার চক্র সম্পর্কে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর দূতাবাস তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট জব্দ করে।
'এ বছরের শুরুর দিকে তিনি বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন এবং আরেকটি পাসপোর্ট নিয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। এরইমধ্যে তাকে খুঁজে বের ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডি। আজম ও তার দল অনেক বছর ধরেই তরুণীদের দুবাইয়ে পাচার করে আসছিল।'
যেভাবে কাজ চালাত এই চক্র
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, মূলত ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী শত শত নারীকে অনেকটা বিনা খরচে কাজ দেওয়ার কথা বলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছে এই চক্র।
প্রথমে আজম খান ও তার চক্র দুবাইয়ে থাকা তাদের চারটি হোটেলে ওই নারীদের চাকরি দিত। দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের ড্যান্সবারে কাজ করতে বাধ্য করত চক্রটি। আর এর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বাধ্য করত দেহব্যবসায় জড়াতে।
ড্যান্সবার ও দেহব্যবসায় জড়াতে রাজি না হলে ওই নারীদের কপালে নেমে আসত নির্যাতন- জানিয়ে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ২ জুলাই রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। মানব পাচার চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন আজম খান।
এই চক্র সম্পর্কে আরও তথ্য হাজির করে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে, গত আট বছরে বাংলাদেশ থেকে এক হাজারেরও বেশি নারীকে পাচার করেছেন আজম।
কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি, দুটি বিদেশি এয়ারলানস এবং অর্ধ শতাধিক দলাল বাংলাদেশে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। আজম নিজেও মানবপাচারে সরাসরি জড়িত থাকতেন। তার দুই ভাই তাকে সহযোগিতা করতেন। তারা দুবাইয়ে পালিয়ে রয়েছেন।
ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, মানব পাচারের অভিযোগ পেয়ে আজমের পাসপোর্ট জব্দ করে, একটি 'আউট পাস লেটার' দিয়ে তাকে দেশে পাঠিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস।
দেশে ফিরতে চেয়ে শতাধিক নারীর আহাজারির অডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে আজমের মোবাইল ফোনে, জানান সিআইডি কর্মকর্তা।