নিবন্ধন করেও টিকা পাননি চট্টগ্রামের ৭ লাখ মানুষ
চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া সুলতানা (২২)। গৃহিণী ও শিক্ষার্থী এ নারী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। গত ১৭ আগস্ট সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য টিকার অনুমতি দিলে তিনি সেই দিনই টিকার নিবন্ধন করেন। তবে ১ মাস ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি টিকা নেয়ার জন্য কোন এসএমএস পাননি।
সাদিয়া সুলতানা বলেন, "চিকিৎসকেরা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় টিকা নিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের (৪ মাস থেকে ৭ মাসের মধ্যে) কথা বলছেন। কিন্তু গত প্রায় দেড় মাসেও টিকা না পেয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি।"
শুধু সাদিয়া নন। করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন করলেও এখনো প্রথম ডোজ টিকার জন্য কোন ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস পাননি চট্টগ্রামের এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। ফলে টিকা নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামে টিকার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৩১ লাখের বেশি মানুষ। তাদের দুই ডোজের জন্য টিকা প্রয়োজন ৬২ লাখ। অথচ আমরা সব মিলিয়ে টিকা পেয়েছি মাত্র ২৮ লাখ। তাই সবাইকে একই সময়ে টিকা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।"
ফিরিঙ্গীবাজার এলাকার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম জানান, তিনি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে যান। এ সময় তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন টিকা নিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু তখন কর্তৃপক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, "মডার্নার করোনার টিকা নেই। টিকা আসা সাপেক্ষে এসএমএস প্রেরণ করা হবে। দয়া করে যারা মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ দিতে এসেছেন তারা বাড়ি ফিরে যান।" সেসময় তিনি হাসপাতাল গেইটে এ সংক্রান্ত কয়েকটি নোটিশও ঝুলিয়ে রাখতে দেখেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৩০ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে এক ডোজ ও দুটি ডোজই সম্পন্ন করেছেন ২৪ লাখের মতো মানুষ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও মডার্না মিলিয়ে টিকা পেয়েছে ২৮ লাখ। মজুদ রয়েছে ৫ লাখ ৫৭ হাজারের কিছু বেশি।
ফাইজার ভ্যাকসিন সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, টিকার সমস্যা দুর করতে চট্টগ্রামে ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, "ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ইউনিসেফের একটি টিম চট্টগ্রামে এসেছিল। ফাইজারের ভ্যাকসিন রাখার জন্যে যে ব্যবস্থা, সেগুলো তারা পর্যবেক্ষণ করে গেছেন।"
"চট্টগ্রামে স্টোরেজ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তারা দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিবেন। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে ফাইজার ভ্যাকসিন সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে", বলেন সিভিল সার্জন।