কারিগরি ত্রুটির কারণে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ: গুরুতর আহত ৮ জনকে ঢামেকে স্থানান্তর
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮ শ্রমিককে আজ বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর আগে আজ শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এসএন করপোরেশনের গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হন।
আহতদের উদ্ধারের পর প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকালে তাদের মধ্যে আটজনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আহত শ্রমিকরা হলেন- এইচএমসি ম্যানেজার মোহাম্মদ আহমদ উল্লাহ; মোহাম্মদ আল আমিন, নিরাপত্তা পরিদর্শক; মোহাম্মদ বরকত, শিপ ইন-চার্জ; মোহাম্মদ হাবিল আহমেদ, কাটার ফোরম্যান; এবং মোহাম্মদ নিয়ামুল হক, জাহাজ হেল্পার।
ফিটার ও তেল ক্লিনারসহ আহতরা হলেন- মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ খায়রুল, মোহাম্মদ সাগর, মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ সাইফুল।
প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'আহতদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের শরীরের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।'
তিনি বলেন, 'বিস্ফোরণের শকওয়েভে সৃষ্ট বিস্ফোরণে আরও চারজন আহত হয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'গুরুতর আহত আট শ্রমিকের অবস্থার অবনতি হলে ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের ঢামেক বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করে। বিস্ফোরণে আহত বাকি চারজন চমেক হাসপাতালে রয়েছেন।'
চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলায়মান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এসএন করপোরেশনের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণে অন্তত ১২ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি তদন্ত করছে।'
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিস্ফোরণ ঘটে
স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে এসএন করপোরেশনে ভাঙা একটি ট্যাংকার জাহাজে এ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর জাহাজটি থেকে তারা আগুন ও ঘন ধোঁয়া বের হতে দেখেছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় কল পেয়ে কুমিরা ফায়ার স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিন ঘণ্টার অভিযানে আহত ১২ শ্রমিককে উদ্ধার করে।
কুমিরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার আল মামুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'কম বায়ুচলাচল করে এমন একটি ট্যাংকের ভেতরে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। একজন কাটারম্যান গ্যাস কাটার জ্বালিয়ে দিলে ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়।'
জাহাজ ভাঙা শিল্প বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থা ইপসার সমন্বয়ক মুহাম্মদ আলী শাহিন বলেন, 'যে ট্যাংকারটি ভাঙা হচ্ছিল তা আগে জ্বালানি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হতো। তেল খালাস করার পরও গ্যাস ট্যাংকের ভেতরেই থেকে যায়। তাই ট্যাংকগুলোয় মিথেনের মতো দাহ্য গ্যাস উৎপন্ন হয়। অগ্নিনির্ভর গ্যাস কাটার ব্যবহারের আগে বিশেষায়িত গ্যাস মিটার দিয়ে ট্যাংকগুলো পরীক্ষা করা জরুরি।'
শাহীন সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, 'ইয়ার্ডে হয়তো প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল। প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা একটি সবুজ ইয়ার্ডে এই ধরনের ত্রুটি অপ্রত্যাশিত।'
তবে ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
ইয়ার্ডের পরিচালক মোহাম্মদ বরকত উল্লাহকে কয়েক বার কল দেওয়া হয়েছে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জাহাজ ভাঙা শিল্পে এর আগেও বেশ কয়েকটি ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালেও যমুনা শিপ ব্রেকার্সে একই ধরনের বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল।
সুরক্ষা মান আগের চেয়ে উন্নত হলেও, সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত একটি গ্রিন ইয়ার্ডে প্রযুক্তিগত ত্রুটি এই শিল্পের বিকাশ সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনের নিন্দা
দুর্ঘটনায় ১২ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বিস্ফোরণের জন্য পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবকে দায়ী করেছেন।
আহ্বায়ক তপন দত্ত ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সফর আলী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।