নোয়াখালীতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক, পানি নামার পথ অবরুদ্ধ লক্ষ্মীপুরে
টানা ভারী বৃষ্টি ও ফেনীর মহুরী নদী থেকে ধেয়ে আসা বানের পানিতে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এতে নোয়াখালী জেলার সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া গ্রামীণ সড়কে সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষেরা।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর জেলায় পানি নামার প্রধান তিনটি জলাশয়ে বাঁধ ও মাছ চাষের প্রতিবন্ধতা থাকায় পানি নামার পথ অবরুদ্ধ হয়ে ৫৮টি ইউনিয়নের সবগুলোতেই তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সামান্য সময়ের জন্য লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ ৮ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানিতে নোয়াখালীর সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া জেলার সকল খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নোয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, বুধবার ও বৃহস্পতিবার নোয়াখালীতে ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো.জাকির হোসেন জানান, জেলায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অনেক এলাকায় মানুষের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বেগমগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি উঠে গেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় বন্যা হয়েছে। এসব উপজেলায় ইতোমধ্যে ৩৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা শুকনো খাবার দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠে কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। আমরা বিত্তশালী মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।"
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, "প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আমাদের চাহিদার কথা জানিয়েছি।"
নোয়াখালীতে প্রথমে জলাবদ্ধতা থাকলেও ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সেটা নোয়াখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের সবগুলোতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুমিল্লা অঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি ডাকাতিয়া নদীর লক্ষ্মীপুর অংশ হয়ে মেঘনায় পতিত হয়। কিন্ত জেলার রায়পুর উপজেলা জুড়ে প্রভাবশালীরা ডাকাতিয়া নদী দখল করে মাছ চাষ করার কারণে ডাকাতিয়া হয়ে মেঘনাতে পানি যেতে পারছে না।
অন্যদিকে নোয়াখালীর পানি নামার পথ ওয়াপদা খাল এবং ভুলুয়া নদের শেষ মাথায় বাঁধ থাকার কারণে পানি সরে যেতে পারছে না। এতে করে লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বসতবাড়ি, মাঠ-রাস্তাঘাট, বীজতলা ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে।
একইসঙ্গে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে খাল দখল ও উপকূল প্লাবিতের ঘটনায় নদী তীররক্ষা বাঁধ না থাকাকে দুষছেন স্থানীয়রা।