পদ্মা কেড়ে নিল ঘর বাঁধার স্বপ্ন
নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে নববধূ বেশে যাচ্ছিলেন স্বামীর বাড়ি। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। পদ্মার বুকে নৌকাডুবি কেড়ে নিল সুইটি খাতুন পূর্ণিমার (২০) সব স্বপ্ন। গড়া হলো না তার স্বপ্নের ঘর!
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শুক্রবার নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হন ৯ জন। শুধু সুইটির মরদেহটিই পাওয়া যাচ্ছিল না।
চারদিনের মাথায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শাহাপুর এলাকার পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তার মরদেহ মহানগরীর শ্রীরামপুর ঘাট এলাকার দিকে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল হতে যাচ্ছে। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই রাজশাহীর পদ্মায় বর-নববধূকে বহন করা নৌকা ডুবেছে বলে ধারণা করছেন কমিটির প্রধান রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম।
রোববার বলেন, কমিটি গঠনের সময় দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে রোববার রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু আরও কয়েকটি কাজ বাকি থাকায় সোমবার পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির দাখিল করতে যাওয়া ওই প্রতিবেদনে এ নৌ দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।
রাজশাহী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এডিএম আবু আসলাম বলেন, ছোট ওই ডিঙ্গি নৌকায় যেখানে ৪/৫ জন যাত্রী নেওয়া সম্ভব সেখানে ২০ জনেরও বেশি করে যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। ফলে মাঝ নদীতে হালকা ঝড়ের কবলে পড়ে পরপর দু'টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ওই দুই নৌকার মাঝি বা নৌকার যাত্রীদের কারোও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিল না। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরী আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে নৌকার মাঝিরও বয়স নির্ধারণ করে দেওয়াসহ প্রতিটি নৌকায় যাত্রী ধারণ ক্ষমতা লিখে দেওয়ারও সুপারিশ করা হচ্ছে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মার চরে বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-নববধূসহ ৪১ জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা কনেপক্ষের বাড়ি থেকে ফিরছিল। ফেরার পথে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বর রুমনসহ ৩২ জন শুক্রবার রাতেই জীবিত উদ্ধার হন। পরে নিহত ৮ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন।
প্রাথমিকভাবে লাশ দাফন-কাফনের জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।