রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভাঙছে পদ্মার পাড়; তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর ডানতীরে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরইমধ্যে বেশকিছু ঘরবাড়ি ভাঙনে তলিয়ে গেছে। আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্রায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, "সপ্তাহখানেক ধরে চলা ভারী বর্ষণে পদ্মার ভাঙন তীব্র হয়েছে। ইতিমধ্যে বয়ারমারী, আমিরপাড়া, জামাইপাড়া ও কামারপাড়া এলাকার ৭০টির মতো বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলি ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দার বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরের মাষকলাই ও টমেটোর ক্ষেত বৃষ্টির পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে।"
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, "ভাঙনের কারণে পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। আজকে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবো। তারপর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।"
এদিকে রাজশাহী নগরের ওপারে চর মাজারদিয়াড় এলাকায় কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন সেখানে ভাঙন নেই। তবে পদ্মার পাড় ভাঙছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়নের ফতেপুর পলাশির নিম্নাঞ্চল, আতারপাড়া, লক্ষ্মীনগর ও চৌমাদিয়া এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাবাসী।
চক রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আজিম বলেন, "চর এলাকার সব কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙনের কারণে চরের ফতেপুর পলাশীর ৬৫টি, লক্ষ্মীনগরের ১০টি, আতাপাড়ারার ৫৫টি ও চৌমাদিয়ার ৩০টির মতো বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হয়েছে। এছাড়া চর এলাকার কয়েকশো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।"
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, "পদ্মার ভাঙনে চরবর্তী এলাকার মানুষজন বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় চরের এলাকার মানুষদের ৫০টি বাড়িঘর সরিয়ে অন্যস্থানে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটা অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চরের চক রাজাপুর ও গড়গড়ি ইউনিয়নের ৩০০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছেন।"
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগের বছরও এই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরইমধ্যে ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বাড়িঘর, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নেও চলছে পদ্মা নদীর ভাঙন। এ এলাকারও অনেকেই আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়ন ও মনাকষা ইউনিয়নের কয়েকশ মানুষজন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, "২০১৮ সাল থেকেই এই ইউনিয়ন ভাঙছে। এবারও তীব্র ভাঙন চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ও হুমকির মুখে। নদীর তীররক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।"
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, "চর আলাতুলির ৫০০টি ও নারায়পুর ইউনিয়নের ৫০০টি বাড়িঘর ভাঙনের আশঙ্কায় চরের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি আশ্রয়কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি কমিউনিটি সেন্টার ভাঙনের আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১৫০০ হেক্টরের মাষকলাইয়ের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই দুই ইউনিয়নে জেলা প্রশাসক দপ্তর থেকে ১০০০ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।"
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, "চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের দুইটি ইউনিয়ন ও শিবগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া পদ্মার ভাঙনেও অনেক মানুষের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আমরা পদ্মার ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছি।"
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। লালপুরের বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর, মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।