পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের দাবি টিআইবির
পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে শতভাগে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সেই সাথে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের বরাদ্দ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহে আরও সক্রিয় হওয়া এবং এ খাতে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে কার্যকর জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে টিআইবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর নিশ্চয়তায় প্যারিস চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।
মানববন্ধন থেকে অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরসহ তরুণ প্রজন্মের পক্ষে বিশ্ব নেতৃত্ব ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ‘বাঁচাও পৃথিবী, বাঁচাও বাংলাদেশ, বাঁচাও প্রজন্ম’ দাবি জোড়ালো কণ্ঠে উত্থাপিত হয় বলে টিআইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "বিশ্ব রাজনৈতিক ও সরকারি নেতৃত্ব, বিশেষ করে শীর্ষ দূষণকারী দেশগুলোর কাছে আমাদের দাবি হলো- বিশ্ব যে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, মানবসভ্যতা যে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, তার দায় আপনাদের, তার জন্য আপনাদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা আর কোনো ফাঁকা বুলি বা রাজনীতি দেখতে চাই না। বিশ্বকে বাঁচানোর দায় এড়িয়ে যাবেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতের অঙ্গীকার সততার সাথে বাস্তবায়ন করুন।"
দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিবেশগত ঝুঁকি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "সারা পৃথিবী যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসছে তখন সরকার দেশে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর আত্মঘাতী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ থাকার পরও কয়লাভিত্তিক বাণিজ্য স্বার্থের ফাঁদে পা দিচ্ছে।"
ভবিষ্যৎ প্রজন্মে এবং জীবন ও জীবিকার জন্য ইতোমধ্যে দৃশ্যমান ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসতে সরকার ও বিনিয়োগকারীদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, "চীন ও ভারতের মতো যে সব দেশ নিজ দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসছে, তারাই আবার সরকারকে জিম্মি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।"
সরকারকে নৈতিক দৃঢ়তার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সর্বনিন্ম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত। তবে যেভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আগ্রাসী বিকাশ ঘটছে এটি অব্যাহত থাকলে এ দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে হবে।"
‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপনের মাধ্যমে যে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে তার কার্যকারিতা নিশ্চিতে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ শুরুতে এ তহবিলে যে পরিমাণ অর্থের যোগান ও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছিল, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে তা ক্রমশ কমে আসছে। পাশাপাশি এ তহবিলের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এমন সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অবশ্যই সচেষ্ট হতে হবে। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে এসব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবি সরকারকে সব রকমভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে,’ যোগ করেন তিনি।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আপন ফাউন্ডেশন, শিশু ফোরাম বাংলাদেশ, ফ্রাইডে ফর ফিউচার বাংলাদেশ ও লেটস চেঞ্জ দ্য ওয়াল্ডের স্বেচ্ছাসেবী ও শিশুরা, টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইয়েস সদস্যরা এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষসহ টিআইবির কর্মীরা এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।