পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করল মেট্রো রেল
ভায়াডাক্টের ওপর মেট্রোরেল চলাচল পরীক্ষণের আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত প্রকল্পের উত্তরা ডিপো থেকে চলাচল শুরু হয়। বেলা ১১টা বেজে ৫৩ মিনিটে ওবায়দুল কাদের সবুজ পতাকা উত্তোলন করার পর ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
ডিপো থেকে ছয় কিলোমিটারের বেশি চলার পর আবার ফিরে আসে ট্রেনটি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, প্রথম দিন ঘন্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে ট্রেনটি চালানো হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মেট্রো রেলের এ চলাচল উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে দেশে মেট্রো রেল চালু হবে।
আগামী ৬ মাস ধরে মেট্রো রেলের 'পারফরম্যান্স টেস্ট' চলবে বলেও মন্ত্রী জানান। পাশাপাশি স্টেশনগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করতে ইন্টিগ্রেশন টেস্ট চলবে তিন মাস।
সবকিছু ঠিক থাকলে পাঁচ মাসের যাত্রীবিহীন ট্রায়াল রান পরিচালনা করা হবে। সব মিলে ১৪ মাসের টেস্ট শেষে বাণিজ্যিকভাবে মেট্রো ট্রেন চলবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বছরের জুন মাসে পরিবহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে। এরপর উদ্বোধন করা হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সড়ক টানেল। ফলে মেট্রোরেল সহ আগামী বছর বড় তিনটি মেগা প্রকল্প চালু হবে বলে মন্ত্রী জানান।
ট্রেনের বৈশিষ্ট্য
২০১৭ সালে সই করা ২৮৭০ কোটি টাকা চুক্তির আওতায় জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম ২০১৯ সালের শুরুতে বগি নির্মাণ কাজ শুরু করে। যাত্রীবাহী কোচ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ওই বছরের এপ্রিলে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে পাঁচ সেট ট্রেন। সব মেট্রো রেল সরবরাহের চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে।
মেট্রো ট্রেনের মোটর কার ও ট্রেইলারের বডিতে ব্যবহার করা হয়েছে এলুমিনিয়াম এলয়। ব্যবহার করা হয়েছে বুলেটপ্রুফ কাঁচ।
ছয় কোচের প্রতি সেটের দুই প্রান্তে থাকবে দুইটি ট্রেইলার কন্ট্রোল। মাঝে থাকবে তিনটি মোটরকার ও একটি ট্রেইলার।
২২ টন থেকে ২৮ টন ওজনের এসব কারের প্রস্থ ২.৯৫ মিটার। ২০ মিটার দীর্ঘ কামরায় লম্বালম্বি আসন পাতা থাকবে। প্রতি সেট মেট্রোতে ১৬৯৬ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ সব কোচের প্রতিটিতে ব্যবহার করা হবে দুইটি এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট।
ট্রেনের প্রতি প্রান্তে চারটি করে দরজা রয়েছে। ট্রেনে প্রাধান্য থাকছে লাল ও সবুজ রংয়ের।
সেকেন্ডের ব্যবধানে এ সব ট্রেনের গতি ঘন্টায় ৩.৫ কিলোমিটার বাড়ানো যাবে। প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন।
নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা
মেট্রো রেলের প্রতি সেটের একটি কোচ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অন্যান্য কোচে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ভ্রমণ করতে পারবেন। গর্ভবতী মহিলা ও অতিরিক্ত বয়সীদের জন্য প্রতি কোচে থাকবে সংরক্ষিত আসন।
প্রতিবন্ধীদের জন্য কোচের ফ্লোর এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উচ্চতার সমতা রাখা হবে। কোচ ও প্ল্যাটফর্মের মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকবে ন্যূনতম। ট্রেনের উভয় প্রান্তের কোচে হুইল চেয়ারের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ট্রেনে থাকবে অডিও ইনফরমেশন সিস্টেম। আর শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে ও মনিটর।
স্বয়ংক্রিয় ট্রেন পরিচালনায় লাগবে ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত
সম্পূর্ণ চালু হলে মেট্রো রেল পরিচালনায় ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। মতিঝিল আরএসএস থেকে ডিপিডিসি এবং উত্তরা আরএসএস থেকে ডেসকো বিদ্যুত সরবরাহ করবে।
কোন সাব-স্টেশন বিকল হলে ট্রেন পরিচালনা অব্যাহত রাখতে ব্যবহার করা হবে রিং সার্কিট ট্রপোলজি প্রযুক্তি। এরপরেও সম্ভাব্য বৈদুতিক সমস্যায় রাখা হচ্ছে ব্যাকআপ সোর্স পাওয়ার। তবে এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের কোন সুযোগ থাকছে না।
রক্ষা পাবে সময় ও পরিবেশ
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৪০ মিনিটে পাড়ি দেবে মেট্রো রেল। এতে যাত্রীদের সময় বাঁচবে দুই ঘন্টা করে, সাশ্রয় হবে কর্মঘণ্টার।
এ রুটে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।
এই প্রকল্পের সুবাদে প্রতি বছর কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমবে ১৭৩৩১২ টন। এর ফলে পরিবেশের সুরক্ষা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও এর আশেপাশে ডিএমটিসিএল এর অধীনে ছয়টি মেট্রো রেল নির্মাণ করতে চায় সরকার। এ সব লাইনের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২৮.৭৪ কিলোমিটার।
এর মধ্যে ৬৭.৫৭ কিলোমিটার উড়াল ও ৬১.১৭ কিলোমিটার পাতাল রেল হবে। উড়াল ৫১টি ও পাতাল ৫৩টি মিলে মোট মেট্রো স্টেশন হবে ১০৪।