পর্যটন নগরীকে স্বস্তি দেবে ‘চার লেন সড়ক প্রকল্প’
রাজধানীর মিরপুর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন আশরাফুল ইসলাম। ভোর সাড়ে ৬টায় গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু ইজিবাইকে ওঠার পরই যানজটের মধ্যে পড়েন। এত সকালে যানজটের কারণ জানতে চাইলে ইজিবাইক চালক জানান, এটি কক্সবাজার শহরের নিত্যদিনের ঘটনা। তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন ওই চালক। বললেন, রাস্তা চার লেন করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই রাস্তা হয়ে গেলে আর যানজট থাকবে না।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে চাকরি করেন কাউছার আলম। তিনিও জানালেন কক্সবাজার শহরে ঢুকতে যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার। এ পথ অতিক্রম করতে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু সেই রাস্তা পেরোতে এখন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এর সঙ্গে যোগ হয় কক্সবাজার শহরের প্রবেশপথ লিংকরোডের আধা ঘণ্টার যানজট। পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে এই যানজট আমাদের মনকে বিষিয়ে তুলেছে।’’
পর্যটন খাতের উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে কক্সবাজারে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। কিন্তু এই শহরে যানজট এখন ‘বিষফোঁড়ায়’ পরিণত হয়েছে। অপ্রশস্ত একটি রাস্তা দিয়ে সব যান চলাচলের কারণে ভোর থেকেই শুরু হয় যানজট। যা পর্যটকদের কক্সবাজার বিমুখ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে চলমান এ ভোগান্তি এড়িয়ে পরিচ্ছন্ন পর্যটনের অনুভূতি আনতে শহরের প্রবেশপথ লিংকরোড থেকে কলাতলীর লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেন করার কাজ শুরু হয়েছে। যার ফল চলতি বছর থেকেই পর্যটক ও স্থানীয়রা ভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের ঠিকাদার নাজমুল হাসান।
প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি কলাতলী-বাইপাস-নতুন জেলখানা-পুলিশ লাইন ও বাস টার্মিনাল হয়ে লিংকরোড পর্যন্ত যাবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই কাজের উদ্বোধন করেছেন কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। চলতি বছরেই কাজটি শেষ হবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা আজিজ মওলা চৌধুরী বলেন, ‘‘রাস্তাটি চার লেনে প্রশস্ত হলে পর্যটকরা কক্সবাজারে ঢুকতেই পরিচ্ছন্ন পর্যটনের অনূভূতি পাবেন। অবসান ঘটবে চলমান যানজটসহ জনচলাচলের ভোগান্তির। এ প্রকল্প কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসাকে বহুগুণে প্রসারিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, মাঝখানে ১০ ফুট ডিভাইডার, দুই পাশে ৬ ফুট করে ড্রেনসহ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৭১ ফুট। ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি টাকা জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় হবে। বাকি অর্থ ব্যয় হবে সড়ক নির্মাণে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
‘‘এরই মধ্যে লাবণী পয়েন্ট থেকে লিংকরোড পর্যন্ত একপাশ খনন ও মাটি পূনঃস্থাপন কাজ শেষ হয়েছে। অপেক্ষা এখন পাকা করণের। আশা করছি চলতি বছরেই চার লেনের সুফল পাবে পর্যটক এবং স্থানীয়রা।’’ বললেন পিন্টু চাকমা।
সৈকতের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল এবং অন্যান্য পর্যটন সেবা প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধ করছে। কিন্তু এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। অপ্রশস্ত একটি রাস্তা থাকলেও পর্যাপ্ত ফুটপাত নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার উপর দিয়েই পর্যটক এবং স্থানীয়দের চলতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘ এ ভোগান্তি নিরসনে পর্যটন সড়কটি চার লেইনে করার উদ্যোগটি প্রশংসার দাবিদার। যতদ্রুত সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করলে সবার উপকার হবে।
কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘আট কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই পড়েছে আমার পৌরসভায়। তাই গুণগত মান ঠিক রেখেই সড়কটি বাস্তবায়নে নজর রাখা হচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে কক্সবাজারে পর্যটন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।’’
চার লেন প্রশস্তকরণ প্রকল্পের ঠিকাদার নাজমুল হাসান পাখি বলেন, পর্যটনের কথা মাথায় রেখে গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি দ্রুততম সময়ে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুনো হচ্ছে। কাজ করতে কিছু কিছু জায়গায় সামান্য বেগ পেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা সেসব জায়গায় সহযোগিতা দিচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপকারভোগীরা আন্তরিক হলে আমরা প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে পারব।