পর্যায়ক্রমে জাতীয় মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
পর্যায়ক্রমে দেশে জাতীয় মহাসড়ককে টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে সংবাদিকদের অবহিত করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-উত্তরবঙ্গসহ দেশের সব বড় বড় মহাসড়ক ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করা হবে। টোলের একটা অংশ সরকারি তহবিলে জমা হবে। বাকি অংশ দিয়ে একটি রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল গঠন করা হবে। এ তহবিলের অর্থায়নে দেশের সব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবরা শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে একনেক সভায় অংশ নেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যাদের টাকা আছে, তারা অনেক সময় ক্ষমতা বলে টোল দেয় না। এ সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
এসময় পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, ২১০ কিলোমিটারের সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬৯১৮ কোটি টাকা । প্রকল্পের আওতায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কে সড়ক হবে চার লেন উন্নীত করা হবে। ধীর গতির যানের জন্য আলাদা দুটি লেন রাখা হবে। এটি মূলত ছয় লেনের সড়ক হবে এটি।
এ সড়ক উন্নয়নে ১৩২৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
ভারত, বাংলাদেশসহ ছয় দেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) বাড়াতে সরাসরি সড়ক অবকাঠামো তৈরির উদ্দেশ্যে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করছে সরকার।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পূর্ব দিকের দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে মিয়ারমার, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সহজ হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের সড়ক পরিবহন নেটওয়ার্ক যথাযথ মানে উন্নীত করে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্তির মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রতি কিলোমিটার প্রতি ব্যয়
কিলোমিটার প্রতিব্যয়, ২১০ কিলোমিটারের ঢাকা-সিলেট সড়ক উন্নয়নের এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় হবে ৮০ কোটি টাকার বেশি।
চলমান ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে সড়কটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৮৬ কোটি টাকারও বেশি। তবে ওই প্রকল্পে ১৫১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ প্রায় ৮১৮ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ছিল।
চলমান সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেন প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৬৪ কোটি টাকা। সেখানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তার চেয়ে ১৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর মহাসড়কে এই ব্যয় ছিল ২১ কোটি টাকা। হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেইন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছিল ৫৫ কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী-কাচপুর সড়ক চার লেন থেকে আট লেইনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ২২ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে এখন তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাঁচ কিলোমিটারের একটি ব্রীজ রয়েছে। এ কারণে ব্যয় বেশি মনে হতে পারে। তবে সরকার প্রধানের এ খানে নির্দেশ রয়েছে ব্যয় কমিয়ে গুণগতমান কমানো যাবে না। একটি গুণগত মানসম্মত সড়ক নির্মাণে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে তাই ব্যয় করা হবে।
অন্যান্য প্রকল্প
সাসেক ঢাকা-সিলেট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পসহ একনেক সভায় মোট ২৪১২৭ কোটি টাকার মোট ৯ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের একটি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩৯৮২ কোটি টাকা। মঙ্গলবারের একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৪৫১৭ কোটি টাকা করা হয়েছে।
প্রকল্পটি আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পায়রা বন্দর নির্মাণের কর্মপরিকল্পনা আগামী একনেক সভায় উপস্থাপনে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী, নদী খনন বা নদী তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করে বিরতিহীনভাবে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায় নদী খননের কাজ শুরু করে মাঝপথে কাজ বন্ধ রেখা হয়ে যায়। এতে উন্নয়নের সুফল পাওয়া যায় না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেক সভায়, ভোলার দৌলতখান পৌরসভা ও চকিরঘাটসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন, কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, হালদা নদীর ভাঙ্গন রোধ, পশ্চিত গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা, সিলেট বেতার কেন্দ্রের আধুনিকায়ন, এবং বিটিসিএলের ইন্টারনেট প্রটোকল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প।