পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সংসদে তোপের মুখে বিএনপির হারুন
জাতীয় সংসদে পাকিস্তানি ক্রিকেটপ্রেমীদের সমর্থন ও স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানোর পক্ষে কথা বলায় সরকারি দলের সাংসদদের তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপির হারুনুর রশীদ।
পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপি'র এই নেতা বলেন, "বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যাই খেলুক না কেন, পাকিস্তানের সমর্থকরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।
"মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা সারা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে পতাকা ওড়েনা বাংলাদেশের?"
হারুনের অভিযোগ, সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন।
এ সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদে হইচই শুরু করেন।
হারুন বলতে থাকেন, "পাকিস্তান টিমের তো আসার দরকার ছিল না। পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তারা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়।"
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে পড়ে শোনান তিনি। সাংসদ হারুন বলেন, "বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভারত-বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছি। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছি।"
হারুন বলেন, দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন এটি (বঙ্গবন্ধুর ভাষণ) তার দলিল।
এসময় সরকারি দলের সদস্যের হইচইয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে কিছুটা বিব্রত হয়ে হারুনুর রশীদ স্পিকারের কাছে 'প্রোটেকশন' চান।
এরপর বলেন, "বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন তাহলে আর কী বলবো মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি ওনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।"
এরপর হারুন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মোমিন তালুকদারের প্রসঙ্গ টেনে বলতে থাকেন। কিন্তু স্পিকার তাকে থামিয়ে দেন।
পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে সংসদে কথা বললেন, এতে তার প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে।
"তারা যে রাজাকার, আলবদর, আল শামসের পক্ষে কথা বলছে ও রাজনীতি করছে, তারা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণ হয়েছে।"
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালনপালনই করেনি, পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। একই ধারায় তারা এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছে। তার প্রমাণ আজকে হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন।
তিনি বলেন, "বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের গর্ব ও অহংকারের জায়গায় ফিরে গেছে বাংলাদেশ। এটাই হচ্ছে বিএনপি ও হারুনুর রশীদদের কষ্ট। আমরা তাদের কষ্ট ও দুঃখ বুঝি। কিন্তু সেই জায়গায় বাংলাদেশ আর কখনো ফিরে যাবে না।"