পানির নিচে রংপুর শহর!
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে নাকাল নগরবাসী। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৫ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের অন্তত ১২ লাখ নাগরিক।
স্থানীয়রা বলছেন, সিটি করপোরেশনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় তাদেরকে জলাবদ্ধতার মতো সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে। যদিও সিটি করপোরেশনের দাবি, চারপাশে প্রচুর পরিমাণ পানি আটকে থাকায় নগরের বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। তবে শিগগিরই এ পানি শহর থেকে নেমে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী তিনদিন রংপুরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। যদিও গত ২৪ ঘন্টার মতো ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা নেই।
নগরীর ঘুরাতি পাড়ার ওমর আলী জানান, সকাল থেকে তিনি ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না। বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে আছে। রান্না বন্ধ। বিদ্যুৎও নেই।
নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রিপা আখতার বলেন, মধ্যরাত থেকে বৃষ্টির কারণে সিটি করপোরেশনের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এই দুরবস্থা। অফিস-আদালত এবং হাট বাজারে যেতে পারছেন নগরবাসী। এ জন্য তিনি রংপুর সিটি করপোরেশনকে দায়ী করছেন।
গুরাতিপারার মাহমুদ হোসেন জানান, তার বাড়িতে ঘর আছে মাত্র দুইটি। দু'টি ঘরই পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এবারই আমার বাড়িতে পানি উঠেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে পড়ে গেছি। রান্না বন্ধ। রাস্তায় পানি থাকায় ঘরের বাইরেও বের হতে পারছি না।
রংপুর কাছারি বাজার এলাকার মো. কাদেরী জানান, বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হওয়া পানি তার ঘরে ঢুকে খাট-বিছানা পর্যন্ত ডুবে গেছে। সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৪ ঘন্টায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুর নগরের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী তিনদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো শঙ্কা নেই।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছি দাবি করে তিনি বলেন, শহরের চারপাশে প্রচুর পানি থাকায় নগরের পানি বের হতে পারছে না। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে পানি নেমে যাবে।
তিনি বলেন, যারা দুর্ভোগে আছেন তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান জানান, প্রতিটি এলাকাতেই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।