পানের জর্দা-খয়েরে পাওয়া গেছে বিষাক্ত ধাতব উপাদান
পানের সঙ্গে যারা খয়ের বা জর্দা খেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ।
খয়ের, জর্দা এবং নস্যির মতো তামাক জাতীয় পণ্যে সীসা, ক্যাডমিয়াম আর ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ধাতব উপাদান পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
এই সব ক্ষতিকর ধাতব উপাদান থেকে হতে পারে ক্যান্সারের মতো ভয়ানক রোগ, নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার লিভার।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
তামাক সেবনের কারণে সৃষ্ট রোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন ড. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। তিনি বলেন, সীসা, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়ামের মত ধাতব উপাদানের উপস্থিতি অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, “ধূমপান ছাড়াও যেসব তামাক সেবন করে মানুষ, এর কারণে মুখের ক্যান্সার সহ হতে পারে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিডনী এবং লিভারও। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে পারে ভয়াবহ পরিণতি, জন্ম হতে পারে প্রতিবন্ধী শিশুর।”
তিনি জানালেন, বিষাক্ত খয়ের, জর্দা আর নস্যির কারণে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর এইসমস্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান সাইয়েদা সারওয়ার জাহান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে দেশে উৎপন্ন খয়ের, জর্দা ও নস্যির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর সংগৃহীত নমুনার সবগুলোতেই বিপজ্জনক মাত্রার বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে।
ল্যাব পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা গেল দেশীয় বাজারে চালু সমস্ত ব্র্যান্ডের খয়ের ও জর্দার প্রতি কিলোগ্রামে .২ মিলিগ্রাম থেকে ১১.২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত এইসমস্ত ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
বাজারের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হাকিমপুরি জর্দার প্রতি কেজিতে .২৬ মিলিগ্রাম সীসা, .৯৫ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম এবং ১.৬৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। বাজারের অন্যান্য ব্র্যান্ড শাহজাদী জর্দা, বৌ শাহজাদী জর্দা, মোকিমপুরি জর্দা, ঢাকা জর্দা, রতন জর্দা এবং জাফরানি জর্দায়ও কাছাকাছি পরিমাণে পাওয়া গেছে এই সমস্ত উপাদান।
যদিও বিদেশি কোন ব্র্যান্ডের তামাক এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয় নি।
সাদা বাক খয়ের এর প্রতি কেজিতে ১১.১২ মিলিগ্রাম সীসা, .১০ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম এবং ৬.৬২ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাজারের আরেক জনপ্রিয় জর্দার ব্র্যান্ড শাহজাদা গুল। এর প্রতি কেজিতে সীসা পাওয়া গেছে .৬৬ মিলিগ্রাম, ১.৭৩ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম এবং ৫.২৩ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম।
বিএসটিআই এর সদস্য প্রফেসর ড. মো আবদুল আলীম বলেন, “ শরীরের জন্য কতটুকু মাত্রায় এইসমস্ত ক্ষতিকর উপাদান সহনীয় তার কোন নির্ধারিত মাত্রা নেই। কিন্তু তামাকজাতীয় এইসমস্ত পণ্যে এই উপাদানগুলো থাকার কথা নয়।”
ইতোমধ্যে এইসমস্ত পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
চেয়ারম্যান সাইয়েদা সারওয়ার বলেন, “প্রথমে উৎপাদকদের নোটিশ পাঠাবো আমরা। এরপরও যদি পণ্যের মান উন্নয়ন না করে তবে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, “একদম উৎস থেকেই নির্মূল করতে চাই আমরা। আর তাই এই ক্ষতিকর ধাতব উপাদানগুলো কারা সরবরাহ করছে তা চিহ্নিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে শীঘ্রই মিটিঙে বসবো আমরা।”