পিকে হালদারের ৭,০৬০ শতাংশ জমি ক্রোক, ভূমি রেকর্ড বাজেয়াপ্ত
কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালাতক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার অরফে পিকে হালদারের গোপন গুদাম থেকে প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির কয়েকশ' দলিল উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
প্রাথমিকভাবে যেসব সম্পদ শনাক্ত হয়েছে, তাতে জমির পরিমাণ ৭০৬০ শতাংশ এবং বাজার মূল্য অন্তত এক হাজার কোটি টাকা।
এসব প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির সন্ধান পেয়ে আদালতের নির্দেশে সেগুলো জব্দ করেছে সংস্থাটি।
দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র ও আদালত সূত্র- দ্য বিজনেস ষ্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুদক সুত্র জানায়, প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক যে মামলাটি করে- তার তদন্ত করতে গিয়ে এসব সম্পদের সন্ধান পায় সংস্থাটি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন মামলার তদন্ত করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভূলতায় একটি গুদামের সন্ধান পান। সম্প্রতি সে গুদামে অভিযান চালিয়ে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল উদ্ধার করে ওইসব দলিল।
দলিলগুলো পর্যালোচনা করে প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির একটি তালিকা তৈরি করে দুদক দলটি। প্রথম ধাপে রাজধানীর উত্তরায় একটি দশতলা ভবন, ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নরসিংদীতে ৭০৮০ শতাংশ জমি শনাক্ত করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত থেকে এসব সম্পদ জব্দ করার অনুমতি পাওয়া যায়।
তদন্তের অংশ হিসেবে এরইমধ্যে পিকে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারি, ঘনিষ্ঠ সহযোগী অনিন্দিতা বড়াল, কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেপ্তার করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
দুদকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, পিকে হালদারের সম্পদের এসব তথ্য পাওয়ায় মামলায় নতুন গতি আসবে।
এ মামলা ছাড়া পিকে হালদারের জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে সংস্থার আরেকটি দল অনুসন্ধান করছে। ওই দলটি দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে জালিয়াতির ঘটনায় প্রথম পর্যায়ে গত ২৫ জানুয়ারি হালদারসহ ৩১জনকে আসামি করে ৫টি মামলা করেছে। এর ধারাবাহিকতায় আরও মামলা আসছে বলে জানিয়েছে দুদক।
ওইসব মামলায় পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও আইএলএফএসএল-এর সাবেক এমডি রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, পিকে হালদার অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে এপর্যন্ত পাওয়া টাকার এ পরিমাণ, সামনে আরও বাড়তে পারে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
এরমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে তিনি আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা। একই কৌশলে তিনি ও তাঁর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ২৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। ঋণের নামে তুলে নেওয়া এসবের বিপরীতে মর্টগেজ নেই বললেও চলে। দুদক বলছে, ফলে ঋণ পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এর বাইরে পিকে হালদার সিঙ্গাপুর, ভারত ও কানাডায় প্রায় হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন মর্মে গোপন সূত্রে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
বিদেশে থাকা পিকে হালদার গত বছরের ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তার দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।
আদালত তাতে অনুমতি দিলেও, পিকে হালদার না ফেরায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত আগেই পি কে হালদারের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও আদেশ দিয়েছেন।