পুনরায় সরাসরি ক্লাস শুরু করতে ধীরগতিতে এগোচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
১২ই সেপ্টেম্বর থেকে দেশের অন্যান্য স্তরের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান শুরু হলেও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় সরাসরি ক্লাস শুরু করতে কিছুটা ধীরগতিতে চলছে ।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখনও সরাসরি ক্লাস শুরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা যেতে পারে, যেখানে এখনও সরাসরি ক্লাস শুরু করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ৪৪ লাখ উচ্চ শিক্ষার্থীর প্রায় ৩৬ লাখই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে রয়েছেন।
পুনরায় সরাসরি ক্লাস শুরু করতে এবং সম্ভাব্য সেশনজট এড়ানোর লক্ষ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৭ই মে-এর মধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য সক্ষম শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের তালিকা পাঠানোর অনুরোধ করেছিল।
সরাসরি ক্লাস শুরু করতে বিলম্বের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসে ডিজিটাল বৈষম্যের অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা এবং নানা ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এটা দুঃখজনক যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা দিতে বিলম্ব করছে। একই সঙ্গে, শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদেরও এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মশিউর রহমান টিবিএসকে বলেন, তারা সরাসরি ক্লাস শুরু করার কোনো উদ্যোগ এখনও নেননি।
তিনি বলেন, "আমরা এই মাসের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোকে পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছি। আমরা শীঘ্রই একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেব।"
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই এমন ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার সুবিধার্থে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে একটি ওয়েবসাইট খুলেছে ইউজিসি। সেখানে জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
তবে এনইউ ভিসি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাড়া দেওয়ার প্রবণতা খুবই কম; ওয়েব লিঙ্কের মাধ্যমে মাত্র ২ লাখ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। এই শিক্ষার্থীদেরও টিকা পেতে পরবর্তী কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ পর্যন্ত, প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে, ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ পেয়েছে এবং প্রায় দেড় লাখ দ্বিতীয় ডোজ পর্যন্ত সম্পন্ন করেছেন। অন্যদিকে আবার অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধনের পরও টিকা দিতে তাদের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সাত্তার হোসেন টিবিএসকে বলেন, তিনি গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়েব লিঙ্ক ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু এখনও তাকে টিকা দেওয়ার তারিখ জানানো হয়নি।
ইডেন মহিলা কলেজের সুমাইয়া আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের মাঝে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমার এনআইডি নেই। আমি ওয়েব লিঙ্কের মাধ্যমে টিকার জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু ১৫ দিন পরেও আমি এখনও টিকা পাইনি।"
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজট কমাতে মনোনিবেশ করেছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজট কমানোর লক্ষ্যে, স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো প্রথমে নেবে বলে জানা যায়।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণ এবং অনলাইনে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার মাধ্যমে মহামারির সময়ে ঘটা শিক্ষার ক্ষতি পূরণের উদ্যোগ নেবে, যেন শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণগুলো পেতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশ টিচার্স নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাবির প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে পারছে না। সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
আবার, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫১ শতাংশ পরিবারে টেলিভিশন নেই।
এদিকে, ব্র্যাকের সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে সংযুক্ত হওয়ার এবং রেকর্ড করা ক্লাসে পরবর্তীতে প্রবেশের সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন ১২ মাসে একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হলেও, এখন সেশনজট কমাতে তা ৮ মাসে শেষ করা হবে। বিভাগগুলো শুক্র ও শনিবারেও পরীক্ষা নিতে পারবে। এছাড়া, প্রতিটি বিভাগকে অনলাইনে ৪০ শতাংশ ক্লাস নেওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মহামারি চলাকালীন অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেবেন শিক্ষকরা। সেইসঙ্গে প্রতি সেমিস্টার এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যথাক্রমে ছয় ও আট সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক একেএম মাকসুদ কামাল টিবিএসকে বলেন, উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি হাই প্রোফাইল মনিটরিং কমিটি সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে এবং লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফল সেমিস্টার থেকে পুরোপুরি ক্লাস শুরু করবে
কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এবং গণ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই সরাসরি ক্লাস শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফল সেমিস্টার অর্থাৎ, অক্টোবর থেকে সরাসরি ক্লাস শুরু করবে।
একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে, তারা সম্পূর্ণভাবে নাকি আংশিকভাবে সরাসরি ক্লাস শুরু করবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শ্রেণিকক্ষে সরাসরি এবং অনলাইন উভয় পদ্ধতিতেই ক্লাস পরিচালনার ব্যবস্থা নেবে। টিকা না নেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর জোর দেবে এবং তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা নিতে নাম নিবন্ধন করেছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি সূত্র।
১৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষক এবং ১৩ হাজার কর্মী এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশের সভাপতি শেখ কবির হোসেন আশা প্রকাশ করেছেন, সকল শিক্ষার্থী অল্প সময়ের মাঝেই টিকা নিতে পারবে এবং পুনরায় শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাসেও অংশ নেবে।