বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভক্ত ছাত্র সংগঠনগুলো
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণার আগেই বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পৃথক দাবিতে দুই বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠনগুলো।
ছাত্রদলের চাওয়া, নির্বাচনের আগে পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেওয়া হোক। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চায় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন।
সম্প্রতি ছাত্র সংগঠনগুলোর দুটি পৃথক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ৩০টি সংগঠন বৈঠক করে। সেখানে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনকে চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ছাত্রদলকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা যোগ দেয়নি।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ২৮টি দল মতবিনিময় সভা করেছে। সেখানে আমন্ত্রণ পায়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসীর উদ্দিন নাসির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সক্রিয় ২৮টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ফেডারেশন।'
তিনি আরও বলেন, 'বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী রাজনীতির কারণে অন্য সংগঠনগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। জুলাই গণহত্যার ট্রমা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের সময় লাগবে। শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করার চেষ্টা সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে।
'আর জাতীয় নির্বাচনের সাথে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সম্পর্ক অপ্রাসঙ্গিক। তাই এমন কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করা উচিত নয় যে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আমরা দুটি নির্বাচনেরই পক্ষে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে।'
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, 'ছাত্রদল কাকে দাওয়াত দেবে না দেবে, সেটা তাদের বিষয়। তবে সময়টি এখন জাতীয় সংহতি প্রদর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন বিভাজনের সময় না। জনগণের সামনে এ ধরনের বিভাজন স্পষ্ট হলে সংহতি স্থাপনের প্রতি আস্থার সংকট বাড়বে। এজন্য সব সংগঠনকেই ম্যাচিউরড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।'
ফেব্রয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জোর দিয়ে উমামা ফাতেমা বলেন, 'প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের জন্য অতি দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শুধু ডাকসুকে প্রাধান্য না দিয়ে আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিবেচনায় রাখতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে হবে, কারণ গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে। আগে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর জাতীয় নির্বাচন একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। নাহলে জাতীয় নির্বাচন আগের মতোই হবে।'
ছাত্রদলের সভায় অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, 'সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আমাদের রাজনীতির পথচলায় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকবে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম অনাস্থা বাড়াচ্ছে।'
এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা চাই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন শুরু হোক। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে। জাতীয় ঐক্যের সময় সবার একসাথেই কাজ করা উচিত। এ সময় ভিন্ন ভিন্ন মতবিনিময় সভা ছাত্রসমাজের কাছে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। তবে আমরা জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখি।'
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমের সমালোচনা করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের নেতারা বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠনগুলোকে অনৈক্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
অভ্যুত্থানে হাজারো জনতার রক্তের ওপরে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহারের কারণে তা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
বিগপ্ততিতে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা এই জাতীয় ঐক্যে যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয়, তার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৯টি ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জরুরি সভা করে। সেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করে।
তবে দ্বিতীয় সভায় ওই ১৯টি সংগঠনের মধ্যে পাঁচটি সংগঠন—ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও স্টুডেন্ট ফেডারেশন—অংশগ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এই সভা থেকে শুরু থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।