বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ কারাগারে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ১২টা ১৫ মিনিটে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে আনা হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান এ আদেশ দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামিকে সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক তিনটায় মিরপুর সাড়ে এগার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে আবদুল মাজেদ তার চেহারা পরিবর্তন করেছেন বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা।
সিটিটিসি আরও জানায়, আবদুল মাজেদ সর্বশেষ ভারতে পলাতক ছিলেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তিনি সম্প্রতি ঢাকায় ফেরেন।
এদিকে ভিডিও বার্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন যে সমস্ত দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের দণ্ডাদেশ কার্যকর করার অপেক্ষায় ছিলাম, তাদেরই একজন ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ আমাদের পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন। কিছুক্ষণ আগে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত থেকে তাকে হাজতবাসের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় (কারাগারে) তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'এই খুনি শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনেই অংশগ্রহণ করেননি, তিনি জেলহত্যায়ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। খুনের পরে তিনি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নির্দেশ মোতাবেক বঙ্গভবন এবং অন্যান্য জায়গায় কাজ করেছিলেন।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা আশা করি, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারব। যারা যারা এ কাজে (খুনি আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারে) সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি মনে করি, মুজিববর্ষের একটা শ্রেষ্ঠ উপহার আমরা দেশবাসীকে দিতে পেরেছি।'
মন্ত্রী অভিযোগ করেন, 'বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার বিচারের বদলে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছে। তাদের যেন বিচার না হয়, ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটি পাকাপোক্ত করেছে। এই খুনিকে আমরা দেখেছি, সেই সরকারের আশীর্বাদে তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিরত অবস্থায় ছিলেন এবং এর পরে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তার আগেই তিনি আত্মগোপন করেন।'
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের নির্মম ও কলঙ্কজনক ওই ঘটনার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় বিচারিক আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
এর আগে, ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর অন্য পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারা হলেন লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এখনো পাঁচজন বিদেশে পলাতক রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেই খুনিরা হলেন কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও লে. কর্নেল এসএইচ নূর চৌধুরী।