বটির দামকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা প্রকল্প কর্মকর্তাদের
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবনায় একটি বটির দাম ধরা হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। একনেক সভায় অনুমোদিত তিন হাজার ২শ' কোটি টাকার এ প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদ প্রকাশের পর; তা সংশ্লিষ্ট মহলের নজরে আসে।
এমতাবয়স্থায়, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার প্রথম ও দ্বিতীয় দফার আওতায় আলোচ্য প্রকল্পের সাবেক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন- এখন সেই সবজি কাটার বটির দাম কিভাবে ১০ হাজার টাকা হলো; তার পেছেনে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।
প্রকল্পে ব্যবহৃত আসবাব এবং রান্নাঘরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র কেনার ক্ষেত্রেও উচ্চদর দেওয়া হয়েছে কিনা; এখন তাকে সেটাও ব্যাখ্যা করতে হবে। প্রকল্পের ছোটখাট গৃহস্থালি পণ্যের অস্বাভাবিক দর নির্ধারণ- নাজিম উদ্দিনসহ আরও কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে হয়েছে, বলে জানা গেছে।
গত ১৯ জুলাই প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে সর্বপ্রথম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে ''হাউ মাচ ডাজ অ্যা বটি কস্ট? ইট কস্টস ১০কে ফর গভট'' শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরপর দর নির্ধারণের নেপথ্যে ভূমিকা রাখা নাজিম উদ্দিন দাবি করছেন, ''কাঠের তৈরি ভিত্তিসহ চার কেজি ওজনের একটি লোহার বটির দাম কাওরান বাজারে সাড়ে ৬ হাজার টাকা! এরসঙ্গে, সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ২০ শতাংশ সরবরাহকারীর মুনাফা এবং পরিবহন খরচ যোগ করতে হবে!"
তিনি আরও বলেন, ''একটি বটি কিনতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে লোহা আর ডলারের দাম বেড়ে যেতে পারে। সবকিছু পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, আগামী তিন বছরে বটির দাম প্রকল্প উন্নয়ন পরিকল্পনায় নির্ধারিত মূল্যের কাছাকাছি হবে।''
গত বুধবার নাজিম আরও জানান, তারা কাওরান বাজার ঘুরে বটির দাম যাচাই করে এসেছেন। সেই দামের একটি মূল্যতালিকাও তারা কমিটির কাছে পেশ করেছেন।
এব্যাপারে পরিকপ্লনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান সায়েদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে- তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, আবাসন ও গণপূর্ত বিভাগ এবং অন্য কিছু সরকারি সংস্থার নিজস্ব ক্রয় সময়সূচী থাকে। সে অনুসারে তারা সরকারি পণ্য ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। তবে সাধারণ পণ্যের ক্ষেত্রে, বর্তমান বাজারমূল্য অনুসারে দর নির্ধারণ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ বলেন, '' প্রায় ২০টি পণ্যের দাম বেশি ধরা হলেও, সেখান থেকে বাড়তি অর্থ আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়। বালিশ কেলেঙ্কারির সঙ্গে একে তুলনা করলে দেখা যায়; ওই প্রকল্পে বালিশ কেনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আলোচ্য প্রকল্পটি কেবলমাত্র অনুমোদন পেয়েছে, তাই ক্রয় প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি।''
মহাপরিচালক আরও বলেন, অনুমোদনের জন্য তার কাছে আলোচ্য প্রকল্প পরিকল্পনা এসেছিল। কিন্তু, সে সময় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায়, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক শাহ আলমের স্বাক্ষরসহ, তা কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাক্ষরের পূর্বে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ব্যয় বিবরণী ঠিক করে নিরীক্ষা করেননি বলেও জানান তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আবার বলছেন, কোভিড-১৯ জনিত দ্রুত বাস্তবায়নের অগ্রাধিকার থাকায়- তারা প্রকল্পটির বিস্তারিত বিবরণ পরীক্ষা করে দেখার সময় পাননি। তাই কৃষি সচিবের সম্মতিক্রমে এটি পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়।
রেহানা সুলতানা নামক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি শাখার আরেক কর্মকর্তাও, বটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করেছেন। বাড়তি দামের বিষয়ে তার কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
জবাবে রেহানা বলেন, ''বাজারমূল্য যাচাই করেই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড়ির জন্য জিনিষপত্র কেনা আর কোনো প্রকল্পের জন্য কেনা, সমান না। প্রকল্প ব্যয়ে ভ্যাট, ঠিকাদারের লাভ, পরিবহন খরচসহ নানা বিষয় মূল দামের সঙ্গে যোগ করা হয়।''
তবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসেই আলোচ্য প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক মীর নুরুল আলম প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির লক্ষ্যে- এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। চার সদস্যের এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন মহাপরিচালক স্বয়ং। কিন্তু বারবার তিনি সতর্ক করা স্বত্বেও কমিটি সদস্য নাজিম উদ্দিন দর নির্ধারণে তার পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন। আলতাফুন নাহার নামের কমিটির আরেক সদস্যের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ জানা গেছে।
এছাড়া, শফিকুল ইসলাম নামে কমিটির আরেক সদস্য নাজিমের সঙ্গে যোগসাজশে আসবাবের উচ্চদর নির্ধারণে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে , কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রকল্পের অনিয়ম খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের ভেতর এ কমিটি তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেবে।
(সংক্ষেপিত)
- মূল লেখা:Boti scandal: project staff tries to justify price
- অনুবাদ: নূর মাজিদ