বনবিভাগ- র্যাবের অভিযানে মৌলভীবাজারে বাঁশ ভাল্লুক, শকুন ও বানর উদ্ধার
বনবিভাগ ও র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের যৌথ অভিযানে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের জালালিয়া রোড থেকে ২টি বাঁশ ভাল্লুক এবং একটি শুকুন ও বানর উদ্ধার হয়েছে।
স্থানীয় বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ড লাইফ (এসইডব্লিউ) এর মাধ্যমে আজ সকালে খবর আসে শ্রীমঙ্গলের জালালিয়া রোডে শ্রীমঙ্গল বার্ডক্লাব এবং ব্রিডিং সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিরল এবং মহাবিপন্ন বাঁশ ভাল্লুকসহ কিছু প্রাণি দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। পরে বনবিভাগ স্থানীয় র্যাব ক্যাম্পকে সাথে নিয়ে সকাল ১১টার দিকে অভিযান শুরু করে এবং বিকেলে ভাল্লুকসহ বাকি প্রাণিগুলো উদ্ধার করে লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যায়।
বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, "আমরা প্রাণিগুলোকে উদ্ধার করে লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে রেখেছি, তাদের পরিচর্যা শেষে অবমুক্ত করা হবে। কেনো আটকে রেখেছিল তা আমরা তদন্ত করে দেখবো এবং সে অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেব।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল ইসলাম জানান, এটি (বাঁশ ভাল্লুক) খুবই বিরল প্রজাতির প্রাণি। বর্তমানে এরা সংকটাপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে । এর ইংরেজি নাম বিন্টুরং (Binturang)।
সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর জঙ্গলের এদের পাওয়া যায়। এরা সাধারণত লতাপাতা খায় তবে মাঝেমধ্যে পাখি, পাখির ডিমও খায় ।
চিরসবুজ বনে রাতের বেলা এদের বিচরণ, তবে দিনের বেলায় বড় গাছের উপরে লুকিয়ে থাকে। বড় গাছের অভাবে বাসস্থান নষ্ট এদের জন্য বড় হুমকিস্বরূপ। এদের নামের সঙ্গে ভাল্লুক যুক্ত থাকলেও এরা আসলে ভাল্লুক নয়। অনেক এলাকায় গাছ ভাল্লুক হিসেবে ডাকা হয়।
অন্যদিকে, উদ্ধার হওয়া বানরটি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ভাবা হত।
বানর গবেষক তানভীর আহমেদ জানান, এর ইংরেজি নাম স্টাম্প টেইল্ড ম্যাকাকস (Stump-tailed Macaque)। বাংলা নাম ছোট লেজি বানর বা খাটোলেজি বানর।
১৯৮৪ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে ওই সময় এই প্রজাতির বানরের বসবাস ছিল। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে পর বাংলাদেশে আর কোথাও প্রাণিটিকে দেখা যায়নি, সে কারণেই প্রাণিটি এ দেশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, স্টাম্প-টেইল্ড ম্যাকাক বা বিয়ার ম্যাকাক বা খাটোলেজি বানর বাংলাদেশের পাঁচটি বানর বা ম্যাকাক-এর মাঝে একটি এবং সবচেয়ে দুর্লভতম। অন্য ম্যাকাকদের নিয়ে ছবি বা তথ্য উপাত্ত কিছুটা থাকলেও এই প্রজাতি নিয়ে একেবারেই কোনো রকম সাম্প্রতিক তথ্য নেই।
'এই আবিষ্কার উত্তর-পূর্ব বনাঞ্চলের জন্য আশা জাগানীয়া। সাফারি পার্কের পরিবর্তে এ ধরনের প্রানীদের খোঁজে আরেও গবেষণা করা দরকার।বিশেষত, আদমপুর, মুরাইছড়া এবং লাঠিটিলা বনকে জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি।'