বর্তমান হারে কমতে থাকলে ২০৫০ সালে দেশে কৃষি জমি থাকবে না: পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক
বর্তমান হারে ভূমি অবক্ষয় চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোন কৃষি জমি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম রফিক আহম্মেদ।
গতকাল পারিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে এক শতাংশ হারে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোন কৃষি জমি থাকবে না।"
মহাপরিচালক বলেন, "২০০১ সালে ন্যাশনাল ল্যান্ড ইউস পলিসির ড্রাফট হয়েছিলো। এর কোন ব্যবহার দেখছি না। ভূমি ব্যবহার পলিসি আপডেট করা প্রয়োজন। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে, দারিদ্র দূর করতে হলে ভূমির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ভূমিকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাচাতে হবে।"
তিনি আরো বলেন, "বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ ভূমি অবক্ষয় ঘটেছে। প্রতিবছর ২৪ বিলিয়ন টন উর্বর ভূমি নষ্ট হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর অর্ধেক ভূমির অবক্ষয় ঘটবে।"
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, "১৯৮২-৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রকৃত ফসলি জমি ছিলো ৯.১৫ মিলিয়ন হেক্টর। ২০১৭-১৮ সালে ফসলি জমির পরিমান কমে দাঁড়িয়েছে ৮.০২ মিলিয়ন হেক্টরে। দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬৯,০০০ হেক্টর আবাদী জমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য চলে যাচ্ছে।"
জিয়াউল বলেন, "উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মাথাপিছু জমির পরিমান হ্রাসের জন্য কৃষি, বন ও জলাভূমির পরিমান হ্রাস পাবে, জীবন জীবিকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। এটি মূলত কৃষি ও বনভূমিতে নগরায়ন ও শিল্পায়ন, রাস্তা ও বাঁধ নির্মানের ফলে ঘটছে বলে অনেকে অভিমত পোষণ করেন।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, " বাংলাদেশ রিও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বিশ্ববাসীর সাথে মরুময়তা, ভূমির অবক্ষয় ও খরা মোকাবেলা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর। মাটির পুষ্টি উপাদান হ্রাস, মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি, মাটির অম্লতা বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয়, নদী ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ততা বৃদ্ধি বাংলাদেশে ভূমি অবক্ষয়ের প্রধান প্রক্রিয়া বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ একটি কার্যকর ভূমির অবক্ষয় পরিবীক্ষণ কার্যক্রম প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "আমাদের অনেক টেকসই ভূমি ব্যবহার প্রযুক্তি আছে যার মাধ্যমে আমরা ভূমি অবক্ষয় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারবো। এছাড়া অবক্ষয় রোধে ভূমিতে বিনিয়োগ হলে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং এদেশের মানুষকে টিকে থাকার লড়াইয়ের সুযোগ করে দিবে যা পক্ষান্তরে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যত উন্নয়নও টেকসই হবে।"