বস্তিবাসীর ফ্ল্যাট ফেরত দিবেন কিনা দুই বছর পর বিবেচনা করবেন চট্টগ্রামের মেয়র
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিনু আকতার। ভূমিহীন মিনুর ঠাঁই ছিলো টাইগারপাস বাটালি হিলের পাদদেশে একটি একচালা ঘরে। বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মিনুসহ ৩৩টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে। ফ্ল্যাট দিবে বলে এসব পরিবারের সঙ্গে চুক্তি করে চসিক। চুক্তিমূলে প্রতি পরিবার থেকে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে নেয়। ঘোষণা অনুযায়ী ১২ কাঠা জমির ওপর করা হয় সাততলা ভবন। কিন্তু মিনুদের ভাগ্যে জুটেনি ফ্ল্যাট। চলতি বছর আন্দরকিল্লা থেকে চসিকের প্রধান কার্যালয় ওই ভবনে স্থানান্তর করা হলে ভেঙে যায় মিনুদের ফ্ল্যাটের উঠার স্বপ্ন।
সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজিত চসিক নিয়ে গণশুনানিতে মিনু আকতার অভিযোগ করেন, আমাদের ফ্ল্যাট দিবে বলে উচ্ছেদ করেছে চসিক। এজন্য চুক্তির মাধ্যমে টাকাও নিয়েছে। কিন্তু চসিক চুক্তি ভঙ্গ করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
এর জবাবে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “নগরে প্রায় ১৪ লাখ বস্তিবাসী রয়েছেন। তাদের বাসস্থান নিশ্চিতের দায়িত্ব চসিকের নয়। কিন্তু সাবেক মেয়র মনজুরুল আলম কেন চসিকের টাকা দিয়ে বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেটি বোধগম্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়টি ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। এজন্য কার্যালয়টি বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন ভবন তৈরির প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই বছর মধ্যে ভবনটি তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। এরপর ভবনটির ফ্ল্যাট বস্তিবাসীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে কিনা তা বিবেচনা করা হবে।”
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ অডিটরিয়ামে এ গণশুনানি হয়। এতে ৬৯টি অভিযোগ উপস্থাপিত হয়।
চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাফর আলম ও নৌমিতার বিরুদ্ধে তালাক নামার নকল তুলতে গেলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভুক্তভোগী।
অভিযোগ শুনে দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম এটিকে অমানবিক বলেন। তিনি বলেন, তালাক নামার নকল নেয়ার সময় ঘুষ দাবি করা অমানবিক।
আবদুল মতিন মুহী নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, রাজস্ব সার্কেল-৫ এর কর্মকর্তা জানে আলম চসিক লেক সিটি প্রকল্পে প্লট দেয়ার নামে তার কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্লট বুঝিয়ে দেয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি।
এর জবাবে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম বলেন, জানে আলমকে প্রতারণার অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা দায়ের করা হবে।
জহির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার গৃহকর এসেছে এক লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সেই টাকা তিনি রাজস্ব সার্কেলেও জমা দেন। কিন্তু তাকে ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধের রশিদ দেওয়া হয়েছে। বাকী টাকা রাজস্ব সার্কেলের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন নতুন করে আবারও বকেয়াসহ কর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম অভিযোগটি ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল ইসলামকে নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, চসিকের ৮০ লাখ টাকার একটি কাজ সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের চাচাতো ভাই সুমন বসাককে দেওয়া হয়েছে।
এর জবাবে তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, ঠিকাদার নিয়োগ হয় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। টেন্ডার নিয়োগ কমিটি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির সুযোগ নেই।
এরপর দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম স্বজনপ্রীতির অভিযোগটি মেয়রকে তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
দেওয়ানহাট সিটি করপোরেশন মার্কেটে ১৯টি দোকান অবৈধভাবে বরাদ্দের অভিযোগ করেন হেলাল নামে চসিকের এক নিরাপত্তারক্ষী।
জবাবে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ওই মার্কেটের ৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দোকানগুলো খালি থাকার কারণে স্থানীয় কয়েকজন সেগুলো দখল করেছিল। তবে রোববার সিটি করপোরেশন এসব দোকান থেকে দখলদারকে উচ্ছেদ করেছে।
ষোলশহর মাস্টার কলোনির বাসিন্দা মো. মামুন অভিযোগ করেন, টাকা না দিলে তাদের এলাকা আবর্জনা নেয় না চসিকের ময়লা গাড়ি। নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় না।
এর জবাবে চসিক মেয়র বলেন, ডোর টু ডোর সিস্টেম চালুর পর প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। এতে গাফিলতির সুযোগ নেই।
এরপর মেয়র অভিযোগকারীকে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ চসিকে দেয়ার জন্য বলেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে গণশুনানিতে মেয়র আ জ নাছির উদ্দিনসহ দুদক ও চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।