বাংলাদেশের এক হাজার নারী শ্রমিককে অর্থ সহায়তা দেবে আমেরিকান ব্র্যান্ড লেভি স্ট্রস
কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চাকরি হারানো এক হাজার নারী শ্রমিককে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে আমেরিকাভিত্তিক তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড লেভি স্ট্রস।
প্রত্যেক শ্রমিককে এককালীন দেওয়া হবে পাঁচ হাজার টাকা । এর মধ্যে ঢাকার ৬০০ শ্রমিক এবং চট্টগ্রামের ৪০০ শ্রমিক এ সহায়তা পাবে।
তবে আপাতত এক হাজার শ্রমিককে এ সহায়তা দেওয়া হলেও খুব শিগগিরই চাকরি হারানো আরও বেশ কিছু শ্রমিকদের এ নগদ সহায়তার আওতায় আনা হবে।
'বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া' শীর্ষক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে লেভি স্ট্রস ফাউন্ডেশন নগদ অর্থ সহায়তা দেবে।
নগদ সহায়তা ছাড়াও তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত আছেন, এমন ৬০০ শ্রমিককে ১২শ টাকা সমমূল্যের পরিচ্ছন্নতা উপকরণ বা হাইজিন কিটস সরবরাহ করা হবে যার মধ্যে সাবান, ডিটারজেন্ট, স্থানীয়ভাবে তৈরি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ফেস মাস্ক, রুমাল এবং হাত ধোয়ার জন্য একটি বালতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ঢাকায় ৩৬০ এবং চট্টগ্রামে ২৪০ জন শ্রমিক এ সুবিধা পাবে।
প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো তৈরি পোশাক খাতের নারী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কোভিড -১৯ থেকে সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি; কেননা সব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তাদের জন্য যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
লেভি স্ট্রস এন্ড কোং জিন্স ও ডেনিম পোশাক উৎপাদনে বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ড। এটি লেভি'স, ডকারস, সিগনেচার বাই লেভি স্ট্রস এবং ডেনিজেন ব্র্যান্ডের আওতায় বিশ্বব্যাপী পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জন্য জিন্স, ক্যাজুয়াল পোশাক এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ তৈরি করে থাকে।
বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একশন এইড তাদের দুই সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে এ প্রকল্পের নগদ সহায়তা ও হাইজিন কিটস শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করবে।
একশন এইডের সহযোগী সংস্থা হিসেবে ঢাকায় সেফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি এবং চট্টগ্রামে সংশপ্তক নামে দুটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ কাজে যুক্ত হয়েছে।
সেফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি এর নির্বাহী পরিচালক, সেকান্দার আলি মিনা জানান, তাদের কাছে আরএমজি শ্রমিকদের যে তথ্য ভান্ডার আছে, সেখান থেকে চাকরি হারানো শ্রমিকদের চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া শ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে। নগদ সহায়তা ও অন্য সহায়তা বিতরণের সুবিধার্থে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক শ্রমিককে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে চলতি মাসের মাঝামাঝি শ্রমিকদের ঘরে ঘরে এ সহায়তা পৌছে যাবে।
এদিকে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিককে এসব সুবিধা দেওয়া হলেও আগামীতে আরও বড় পরিসরে শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেভি স্ট্রস ফাউন্ডেশন ।
একশন এইডের ফোকাল পারসন আজাদুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত প্রকল্পটির সফলতার ওপর শ্রমিকদের জন্য আরও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। কোভিডের কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যাক শ্রমিকই চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই কম মজুরিতে কাজে যোগ দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে একশন এইড আরও ১৮০০ শ্রমিককে নগদ সহায়তা এবং ১০০০ শ্রমিককে হাইজিন কিটস দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। লেভি স্ট্রস ফাউন্ডেশনের পর্যালোচনা শেষে খুব শিগগিরই শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এ ধরণের উদ্যোগ ইতিবাচক। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও শ্রমিকদের এ ধরণের সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে। এ ধরণের উদ্যোগ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে উৎসাহ দেবে।
এর আগে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নগদ সহায়তা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১১৩ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রত্যেক শ্রমিককে নগদ তিন হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এক জন শ্রমিক সর্বোচ্চ তিন মাস এ নগদ সুবিধা পাবে।