বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ৫টি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম
চেনাজানা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে কোভিড-১৯। ইউরোপের পর্যটন শিল্পই হোক কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজার সবকিছুকেই যেন এই মহামারী স্থবিরতার মুখোমুখি নিয়ে এসেছে।
তবে এ বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে যে, শীঘ্রই সব আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে মহামারীর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে জ্ঞানার্জন সম্ভব হচ্ছে না বলে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হচ্ছে । এক্ষেত্রে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে তাদের জ্ঞানচর্চার সুযোগ অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিভিন্ন একাডেমিক কোর্স যেমন থাকছে তেমনি চাকরির ইন্টারভিউয়ে দক্ষতা বাড়ানোর বিভিন্ন কোর্সও এসব ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে আছে।
এখানে বাংলাদেশের ৫টি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের কথা বলা হলো যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতার বিকাশেও সহায়ক-
১০ মিনিট স্কুলঃ সমসাময়িক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক শিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম
২০১৫ সালে আয়মান সাদিকের উদ্যোগে ১০ মিনিট স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে এটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-লার্নিং সাইটে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত এটি পনের লাখ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিষয় শিখতে সাহায্য করেছে।
শুরুটা ছিল ইউটিউবের মাধ্যমে। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও আপলোড করা হত। এখন তো এপ এবং ওয়েবসাইট মিলিয়ে ১৯,৪০০টি ভিডিও এবং ৫০,০০০ কুইজ নিয়ে এটি প্রধান একটি অনলাইন শিক্ষণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে ।
প্রথম থেকে একেবারে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী বিভিন্ন কনটেন্ট তো রয়েছেই, এই প্ল্যাটফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি এবং চাকরির দক্ষতা বাড়ানোর উপযোগী বিভিন্ন ভিডিও ও মিলবে।
অনলাইনে বিভিন্ন ই-বুকস নামিয়ে নেয়ার সুযোগও ১০ মিনিট স্কুল ব্যবহারকারীদের দিচ্ছে। ১০ মিনিট স্কুলের বিভিন্ন ভিডিও বুঝতে এসব ই-বুকস প্রাসঙ্গিক ও সহায়ক।
অনলাইনেই থাকছে বিভিন্ন কুইজ্যের মাধ্যমে নিজের মেধা নিজেই যাচাইয়ের সুবিধাও।
প্ল্যাটফর্মটির অর্থায়নে কাজ করেছে রবি আক্সিয়াটা লিমিটেড ; বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে দেশে ই-লার্নিং ছড়িয়ে দিতে এই শিক্ষামূলক সংগঠনটি কাজ করেছে।
অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বা বিনামূল্যে উভয় মাধ্যমেই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে কনটেন্ট নামিয়ে শেখা যাবে।
শিক্ষক বাতায়নঃ শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম
এই প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক পরিচালিত।
এটি মূলত প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য।
সাইটটির মাধ্যমে শিক্ষকবৃন্দ বিপুল পরিমাণে ভিডিও, উপস্থাপনা, ছবি এবং অন্যান্য শিক্ষা সহায়ক কন্টেন্ট আপলোড এবং ডাউনলোড করতে পারে।
প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের ভেতরেই এটিতে চুয়াল্লিশ হাজার শিক্ষামূলক ভিডিও এবং দুই লাখ ১৪ হাজারের ওপর প্রেজেন্টেশন জমা হয়েছে। সাথে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠানো বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষকদের লেখা এবং ছবি।
শিক্ষকদের এভাবে বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন স্লাইড, ভিডিও এবং নিবন্ধের ব্যাখ্যা প্রদান অন্যান্য শিক্ষকদের জন্যও সহায়ক। শিক্ষার্থীদের কাছে কীভাবে কোন বিষয়কে সহজবোধ্য করে তোলা যায় তা একজনের উপস্থাপনা থেকে অন্যান্য শিক্ষকেরাও বুঝতে পারেন।
তাছাড়া ভাল উপস্থাপনা এবং মানসম্মত ভিডিওর জন্য শিক্ষকদের প্রশংসা ও পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকে এখানে।
যদিও এটি সরকারি তত্ত্বাবধানে চলে তবে যে কেউ এটিতে প্রবেশ করে পছন্দের বিষয় সম্পর্কে জেনে উপকৃত হতে পারে; এখান থেকে শিখতে লাগছে না কোন খরচ।
স্টাডিপ্রেসঃ বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচাতে 'স্বয়ংক্রিয়' শিক্ষণ
স্টাডিপ্রেস বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম যা মূলত চাকরী নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত। প্ল্যাটফর্মটি এর মূল ওয়েবসাইটটির সাথে চাকরির বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা আসার মত প্রশ্ন এবং অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা জুড়ে দিয়ে প্রায় এক লাখ উনিশ হাজার তরুন চাকরি প্রত্যাশীর উপকার করে যাচ্ছে।
এছাড়াও সাইটটি শিক্ষার্থীদের বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) এবং ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ববর্তী বছরগুলোতে আসা বিভিন্ন প্রশ্ন সরবরাহ করে।
স্টাডিপ্রেস প্রিলিমিনারি জবের প্রস্তুতির সুযোগ এনে দেয়; শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলি থেকে তাদের নিজস্ব ভুল এবং ত্রুটি যাচাই করে তা সংশোধনে এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের অগ্রগতিতে সহায়তা করে।
অনলাইন কন্টেন্ট, গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের কৌশল এবং সহজবোধ্য 'ইন্টারফেস'র পাশাপাশি জুড়ে দেয়া ইংরেজি প্রশ্নগুলোর জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরি প্রত্যাশীদের অনেকেই এখন এই প্ল্যাটফর্মটিতে ঢুঁ মারছেন।
রেপটো এডুকেশন সেন্টারঃ বাংলাদেশী অনলাইন কন্টেন্ট নির্মাতা এবং এবং ফ্রিল্যান্সারদের গন্তব্যস্থল
বাংলাদেশে ফ্রীল্যান্সিং এবং অনলাইন কন্টেন্ট তৈরির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। রেপটো এডুকেশন সেন্টার হলো সেই গুটিকয়েক প্ল্যাটফর্মের একটি যা ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহীদের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের প্রস্তাব দিয়ে থাকে।
প্ল্যাটফর্মটিতে এক লাখ দশ হাজারের ওপর শিক্ষার্থী রয়েছে; পাঁচশ'রও বেশি ই-টিচার প্রায় একশটির ওপর কোর্স পড়িয়ে থাকেন।
এন্ড্রয়েড এপ ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডিজাইন, ভিডিও সম্পাদনা, ইলাস্ট্রেশনের মত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ ক্লাস নিয়ে থাকেন; রয়েছে সুদীর্ঘ লেকচার। দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য থাকছে চাকরিরও সুবিধা ।
বেশ সাশ্রয়ী মূল্যেই কোর্সগুলো অফার করা হয়; কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে তো ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকে মাঝে মধ্যে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বেশির ভাগ কোর্সের কন্টেন্ট এখানে বাংলাতেই করা হয়েছে। রেপটো এডুকেশন সেন্টার তাই সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের উদীয়মান ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তা বলাই যায়।
আমার পাঠশালাঃ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের মানুষের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষণের সুযোগ
এই বাংলাদেশী ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষামূলক কোর্সের পাশাপাশি চাকরি প্রত্যাশীদের জন্যও বিনা মূল্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট।
আমার পাঠশালা প্ল্যাটফর্মটিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবিদের জন্য দক্ষতা বিকাশ সম্পর্কিত বারো হাজারেরও বেশি ভিডিও রয়েছে।
এই সাইটটি বিভিন্ন কাজের সুযোগও বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচার করে। আর সবচেয়ে দারুন বিষয়টি হলো, আমার পাঠশালার এই সমস্ত সেবা মিলবে নিখরচায়।
সাইটটির পাঠ ইংরেজি এবং বাংলা উভয় মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।
একাডেমিক বিষয়ে কোর্স ছাড়াও, তারা জাপানি ভাষা শেখার কোর্সও সরবরাহ করে।
আমার পাঠশালা ইউটিউবে এর বিষয়বস্তু আপলোড করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য লাইভ স্ট্রিমের ব্যবস্থাও করে। শুধু দেশেই না, বাংলাদেশের বাইরের অনেকের জন্যও এটি অনলাইন শিক্ষণের উপযুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম।
এই ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলির সাহায্যে শিক্ষার্থীরা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে যা তারা পেশাগত জীবনেও কাজে লাগাতে পারবে। এখন এই মহামারীর সময়ে এই ই-লার্নিং সাইটগুলিই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।