বাংলাদেশের সাথে 'কানেক্টিভিটি' বাড়াতে আগ্রহ নেপালেরও
মালদ্বীপ, শ্রীলংকার মতো নেপালের সঙ্গে আলোচনায়ও কানেক্টিভিটি এবং বাণিজ্যিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশকে সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেইটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাবে রূপান্তর করতে নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কিত নানা বিষয় আলোচনায় এসেছে।
ঢাকা সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনায় একই বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে।
দু'দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী। একই দিনে ঢাকা এসেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও বসবেন তিনি।
নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারীর এ সফরে আলোচনা এবং দু'দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পর্কে ব্রিফ করার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহন-সংযোগ অবারিত ও সুগম করার নানাবিধ উদ্যোগ চলমান আছে।
মোমেন জানান, ১৯৭৬ সালে সম্পাদিত নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির প্রটোকলের সংযোজনী হিসেবে রোহানপুর-সিংঘাবাদ রেল সংযোগ পয়েন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে দুই দেশের মধ্যে একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জ (বিনিময়পত্র) স্বাক্ষরিত হয়েছে এবার নেপালের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়।
এ ছাড়া পর্যটন সহযোগিতা, ২০২২-২০২৫ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি বিষয়ক আরও তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে দুদেশের মধ্যে।
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট ও প্রটোকল চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় নেপালকে ৬টি পোর্ট অব কল দেওয়া হয়। এগুলো হলো চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, বিরল ও চিলাহাটি। এসব পোর্ট অব কলে নেপালের যানবাহন পণ্য পরিবহন করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরসমূহ স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
নেপাল চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে কর্মপদ্ধতি (মডালিটিজ) নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
এছাড়াও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে নেপাল। বাংলাদেশের সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট এবং নেপালের বিরাটগর/ভদ্রপুরের মধ্যে সরাসরি বিমান সংযোগ স্থাপনেও নেপাল আগ্রহী। বাংলাদেশ প্রস্তাব দুটিকে স্বাগত জানিয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, "২০১৫ সালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যালস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) বা মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান রুটসমূহ ছাড়াও নতুন কিছু রুট অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চুক্তিটির ত্রিদেশীয় প্যাসেঞ্জার প্রটোকল স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ও ভারত ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে নেপালের সম্মতি খুব দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।|"
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, "আমরা বিবিআইএন এর ব্যাপারে নেপাল ও ভারতের নীতিগত সম্মতি পেয়েছি। এমওইউ টা স্বাক্ষর করার জন্য তারা প্রস্তুত আছে। কিন্তু ভুটানের পার্লামেন্ট এটাকে এখনো অনুমোদন করেনি। এ কারণে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে তিন দেশের মধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছি, ভুটান পরেও যোগ দিতে পারে"।
ড. মোমেন বলেন, "নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আশা করছি, চুক্তিটি দ্রুতই স্বাক্ষরিত হবে।"
তিনি বলেন, "নেপালের রাষ্ট্রপতি নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় সচিব পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ বিষয়ক কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকসমূহ ইতোমধ্যে হয়েছে। উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে জলবিদ্যুৎ সেক্টরে বর্ধিত সহযোগিতার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন"।
নেপালের হিমালয় পর্বতমালায় বৈশ্বিক উষ্ণতাজনিত কারণে হিমবাহ গলনের ফলশ্রুতিতে নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উভয় পক্ষ জাতিসংঘ ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) সহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে একযোগে কাজ করে যেতে একমত হয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুর বিস্তারিত প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য নেপালকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঢাকা এসেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং।
২০১৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর।