বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে মোদির সফরে সমঝোতা চুক্তি
পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে সহজে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করবে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন ও ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রিমিডিস (ডিজিটিআর)।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শহীদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
'এ চুক্তির আওতায় বিএফটিআই ও ডিজিটিআর নিয়মিত বৈঠক করে দুই দেশের বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টিকারী এন্টি ডাম্পিং ডিউটি, কাউন্টারভেইলিং ডিউটিসহ সেইফ গার্ড মেজার্স সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করবে', যোগ করেন তিনি।
এ চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান।
টিবিএসকে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যে ভারত সরকার আরোপিত এন্টি ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহারের বিষয়গুলো এই চুক্তির আওতায় সমাধানের চেষ্টা করবে দুই দেশ। এছাড়া, বাংলাদেশের কোন পণ্যে এন্টি ডাম্পিং ডিউটি, কাউন্টারভেইলিং ডিউটিসহ যেকোন সেইফগার্ড মেজার্স আরোপের আগে ভারত সরকার বাংলাদেশকে অবহিত করবে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে'।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক ধরণের ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাঁধা রয়েছে, বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও তা সমাধান হচ্ছে না। ভারত বাংলাদেশের পাটপণ্য, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ফিশিং নিটসহ বিভিন্ন পণ্যে এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে। এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে পামঅয়েল ও সয়াবিন আমদানি বন্ধ রাখা, সাফটা চুক্তি লঙ্ঘন করে নতুন কাস্টমস রুলস কার্যকর করেছে ভারত।
কোন দেশ অপর কোন দেশের পণ্যের ওপর এন্টি ডাম্পিং ডিউটি, কাউন্টারভেইলিং ডিউটিসহ বাড়তি শুল্কারোপ করে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করলে তা নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। ২০০৪ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ব্যাটারি রপ্তানির ওপর এন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করলে বাংলাদেশ ডাব্লিউটিওতে অভিযোগ করার পর ভারত তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভারত বাংলাদেশ থেকে জুট ইয়ার্ন, হেসিয়ান ও পাটের বস্তা রপ্তানির ওপর প্রতি টনে ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত এন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি দেয়-এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বেশ কিছু জুট মিলের ওপর কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।
২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির ওপর প্রতিটনে ২৭.৮১ ডলার থেকে ৯১.৪৭ ডলার পর্যন্ত এবং পরের বছর ফিশিং নেট রপ্তানির ওপর প্রতি কিলোগ্রামে ২.৬৯ ডলার এন্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে ভারত।
শহীদুল ইসলাম বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফরকালে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে তিনটি নতুন বর্ডার হাট উদ্বোধন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সীমান্ত ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালাইচর সীমান্তে প্রথম বর্ডার হাট উদ্বোধন করেছিলেন দুই দেশের তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী। পরবর্তীতে আরও তিনটি সীমান্ত হাট চালু করে দুই দেশ। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে বিদ্যমান চারটি বর্ডার হাট এখন বন্ধ রয়েছে।