আরসেপ’এ যোগদানের জন্য বাংলাদেশের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়
চীনের নেতৃত্বাধীন বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্লক রিজিওনাল কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসেপ) এ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহপত্র পাঠাবে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আরসেপে যোগদানের জন্য আগ্রহপত্র পাঠানোর অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করলে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আরসেপে আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহপত্র পাঠানো হবে।"
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আরসেপভুক্ত দেশগুলো ২০১২ সালে আলোচনা শুরু করে ২০২০ সালে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশ একে-অন্যের সঙ্গে পৃথকভাবে নেগোসিয়েশন করেছে।
বাংলাদেশকেও একইভাবে আরসেপভুক্ত ১৫টি দেশের সঙ্গে পৃথক নেগোসিয়েশন করতে হবে।
ফলে চলতি বছর আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলেও নেগোসিয়েশন শেষ করে বৃহৎ এই বাণিজ্য ব্লকে বাংলাদেশের যোগদান করতে দু-তিন বছর সময় লাগবে।
গত মাসে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আরসেপে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সিদ্ধান্ত আসে। তারপরই আরসেপে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ দেশ নিয়ে আরসেপ কার্যকর হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে অন্য দেশও আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারছে। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা ও হংকং আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনেক বিষয় চিন্তা করেই আরসেপে যোগদানের পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত এসেছে। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হবে আসিয়ানসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, যারা আরসেপের অন্তর্ভুক্ত। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত থাকা যৌক্তিক হবে।
তারা বলেন, আরসেপকে চীনের নেতৃত্বাধীন বাণিজ্যিক ব্লক বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াও এই ব্লকের সদস্য। তাছাড়া, ভারত যেকোন সময় ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে আরসেপের সদস্য হতে পারবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ এখন যেসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়ে আলোচনা করছে, তার মধ্যে ভারত ছাড়াই ছয়টি দেশ- জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন আরসেপে রয়েছে।
এই ব্লকে যোগ দিলে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়ার সম্ভাবনার চিত্র ফিজিবিলিটি স্টাডিতে উঠে এসেছে।
আরসেপ'এর অন্তর্ভুক্ত ১৫টি দেশে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৩০% (২.৩ বিলিয়ন মানুষ) এর বাস। সবমিলিয়ে এটি ২৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার।
দেশগুলো নিজেদের ট্যারিফ রিডাকশনের জন্য ১০ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত সময় নিয়েছে। বাংলাদেশ আরসেপে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলে আরসেপভুক্ত ১৫ দেশ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আরসেপে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে রিজিওনাল ভ্যালু চেইনে কানেক্ট হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কতোটুকু বাড়তে পারে, সে সম্ভাবনা নিয়েও মতামত উঠে এসেছে।
যেমন, ভিয়েতনাম চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করে। দেশটিতে চীনের বিনিয়োগও প্রচুর। আবার, চীনসহ আরসেপভুক্ত দেশগুলোতে ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। ফলে ভিয়েতনাম ইতোমধ্যেই আরসেপভুক্ত দেশগুলোর ভ্যালু চেইনের সঙ্গে কানেক্টেড ও ইন্টিগ্রেটেড।
বাংলাদেশ এই ইন্টিগ্রেশনের বাইরে থাকলেও আমাদের কাঁচামাল আমদানির মূল সোর্স চায়না। এ অবস্থায় আরসেপে যোগদান করে বাংলাদেশ কিভাবে বেনিফিটেড হতে পারে, সে বিষয়টি সভায় গুরুত্ব পেয়েছে- জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আরসেপে যোগদান করলে প্রথম ১০ বছরের মধ্যে ৯০% ট্রেডের ক্ষেত্রে ট্যারিফ রিডাকশন করতে হবে। বাকি ১০% এর ট্যারিফ রিকাডশনের ক্ষেত্রে বাড়তি ১৫ বছর পাওয়া যাবে।
আমদানি নীতি আদেশ, রপ্তানি নীতি আদেশ, ট্যারিফ পলিসি, এফটিএ পলিসিসহ বাংলাদেশ এখন যেসব পলিসি প্রণয়ন করছে, তা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও বাণিজ্য উদারীকরণের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।