বিহারে বন্যা সামাল দিতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত
ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট বন্যা থেকে বিহারের রাজধানী পাটনাসহ আরও ১২ জেলাকে রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেটের সবগুলো খুলে দিয়েছে ভারত।
স্থানীয় এপির অনুরোধে কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে জানানো হয়েছে।
ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের বন্যা পরিস্থিতির প্রতি নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, বন্যায় দুই রাজ্যে ৪৮ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে বিহারে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
জিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ায় পশ্চিবঙ্গের মুর্শিদাবাদের একাংশ ও বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মালদা জেলার ফুলহর, মহানন্দা ও কালিন্দী নদীতে পানি বাড়ছে। সেখানে একাধিক জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। চরম বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা ও ফুলহর।
হঠাৎ করে সব গেট খুলের দেয়ার বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এক দিনে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে হয়তো সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও টানা বর্ষণের কারণেও পদ্মার পানি বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৭ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটারে। দুই দিনের মধ্যে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করতে পারে। এতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত।
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলি নদীতে পলি জমা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই পলি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে ভারত। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়।
ফারাক্কা বাঁধ ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফু) লম্বা যেটা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় বানানো হয়েছিল। বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ২৫ মাইল (৪০ কিমি)।
শুখা মরসুমে (জানুয়ারি থেকে জুন) ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গার ৪০,০০০ ঘনফুট/সে (১,১০০ মি৩/সে) পানি হুগলি নদীর অভিমুখে চালিত করে।
১৮ কি.মি লম্বা বাঁধটিতে মোট ১০৯টি গেট রয়েছে। ফারাক্কা সুপার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি এই বাঁধ থেকেই সরবরাহ করা হয়।
তৎকালীন বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে গঙ্গা/পদ্মার মত বিশাল নদীর গতি বাঁধ দিয়ে বিঘ্নিত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হতে পারে।
এ ধরণের নেতিবাচক অভিমত সত্ত্বেও ভারত সরকার ফারাক্কায় গঙ্গার উপর বাঁধ নির্মাণ ও হুগলী-ভাগরথীতে সংযোগ দেয়ার জন্য ফিডার খালখননের পরিকল্পনা ও কাজ শুরু করে । পরবর্তীতে এই বাঁধ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার রাজ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে ।